চলতি মাসেই মিজ়োরাম যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই হাওয়ায় ভাসতে শুরু করে মোদীর মণিপুর সফরের সম্ভাবনার খবর। নানা মহলের জল্পনা, মিজ়োরাম হয়ে মণিপুর যাবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই খবর এখনও নিশ্চিত করেনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এমনকি, এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে মণিপুরের রাজ্য বিজেপিও। যদিও সম্প্রতি, মণিপুরের মুখ্যসচিবের দফায় দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে জল্পনা কয়েক গুণ বেড়েছে। সংবাদ সংস্থা ‘পিটিআই’ সূত্রে খবর, ভিভিআইপি সফরের তৎপরতা চলছে মণিপুরে!
মঙ্গলবার সরকারি এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মণিপুরের মুখ্যসচিব পুনিত গোয়েল দিন দুয়েক আগে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। ভিভিআইপি সফর যাতে কোনও বিঘ্নিত না ঘটে, সেই বিষয় খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব। ওই আধিকারিকের কথায়, ইম্ফলের কাংলায় একটি কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে। সেই কর্মসূচির নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। শুধু ইম্ফল নয়, চুড়াচান্দপুরেও এক কর্মসূচি হতে পারে বলে খবর, সেখানকার নিরাপত্তার বিষয়ও খতিয়ে দেখেন মুখ্যসচিব।
মণিপুরে কোনও ভিভিআইপি যাবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রেখেই ওই আধিকারিক জানান, নবনির্মিত সচিবালয়ের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও, বেশ কয়েকটি প্রকল্পও চালু হবে। মুখ্যসচিবের কথা মতো মণিপুরের ডিজিপি রাজ্যের সব পুলিশ সুপারকে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের ছুটিও বাতিলের কথা বলা হয়েছে।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মিজ়োরামে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মোদীর। সোমবার মিজ়োরামের সরকারি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর রেলের একটি প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে সরকারের কয়েক জন আধিকারিক এ-ও দাবি করেন, মোদীর মণিপুর সফর নিয়ে কিছু তথ্য আইজ়ল পেয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর সফর নিয়ে চূড়ান্ত কোনও নির্দেশ এখনও মেলেনি।
দু’বছর ধরে বেশি সময় ধরে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। গত ৩ মে, ২০২৩ থেকে মণিপুরে হিংসার ঘটনা ঘটেছে বার বার। মেইতেই এবং কুকি জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। গত দু’বছরে মণিপুরে গোষ্ঠীহিংসায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫০,০০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই আবহেই বীরেন সিংহ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। কিন্তু এই দু’বছরে অশান্ত মণিপুর নিয়ে প্রায় ‘নীরব’ই ছিলেন মোদী।
আরও পড়ুন:
বিরোধীরা বার বার দাবি করেছে, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাচ্ছেন না? কেন তিনি মণিপুর নিয়ে কোনও কথা বলছেন না? প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ মণিপুর সফর করেছিলেন ৪ জানুয়ারি, ২০১৯। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে বার বার প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি যাননি, এমনকি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেননি। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে দু’মিনিটের বক্তব্য রেখে মোদী দাবি করেছিলেন, মণিপুরে হিংসা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তার পর, আরও সময় গড়িয়েছে। গত জুলাইয়েও মোদীর মণিপুর সফর নিয়ে জল্পনা দেখা গিয়েছিল। তবে সে বার তিনি যাননি। আবার মণিপুর সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।