Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Coronavirus in India

পরিকাঠামো নেই, নেই পরিষেবাও, দেশের বহু গ্রামে করোনায় উজাড় গোটা পরিবার

পঞ্জাবের গ্রামগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে টিকা নেওয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা করছেন, কেই জ্বরে ভুগছেন কি না।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

করোনার হাত থেকে গ্রামগুলিকে বাঁচানোর কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিকে, চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাবে কোভিড আক্রান্ত হয়ে উজাড় হয়ে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ গ্রাম। যেমন, নয়াদিল্লি থেকে ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বে অবস্থিত বাসি। গ্রামটির সাড়ে ৫ হাজার বাসিন্দার মধ্যে অধিকাংশই আক্রান্ত। গত ৩ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। গ্রামের হাসপাতালে কোনও হাসপাতাল চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই ডাক্তার, অক্সিজ়েন। সর্বোপরি এই সব অভাব-অভিযোগ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন করার মতোও সড়গড় নন গ্রামবাসীরা।

গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের সদ্য নির্বাচিত এক কর্তা সঞ্জীব কুমার বলেছেন, ‘‘এখানে অধিকাংশ মানুষ মারা যাচ্ছেন অক্সিজ়েনের অভাবে। গুরুতর অসুস্থদের জেলা সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রায় চার ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে। ফলে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। এই একই দৃশ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গ্রামগুলিতে। কোথাও গোটা পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, কোথাও দাহ করার লোক না থাকায় মাঠে পড়ে থাকছে দেহ, কোথাও মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে গঙ্গায়। চিকিৎসা পরিষেবা, অক্সিজ়েন, প্রতিষেধক দিতে না পারার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। গত মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাসি-উত্তপ্রদেশের অন্যান্য অংশেও হেরেছে বিজেপি। ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এখন যা-ই হয়ে যাক আমরা বিজেপিকে আর ভোট দেব না’’, বলছেন বাসির বাসিন্দা ৭২ বছরের সাহেব সিংহ। পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বহু ভোটকর্মী। ৫৯ বছরের কুমারসেন ও তাঁর ৩১ বছরের ছেলে ছিলেন তাঁদেরই মধ্যে। প্রবল শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অক্সিজ়েন-সহ অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে অসুস্থ কুমারসেনকে কোনও মতে গ্রামেরই এক হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার। কিন্তু পৌঁছনোর পরে ডাক্তার জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। যদিও শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা। আর এক ছেলে পারভীন কুমার বলেছেন, ‘‘ডাক্তাররা বলেন বাবার কোভিড হয়েছিল কি না তা পরীক্ষার দরকার নেই কারণ তিনি ততক্ষণে মারা গিয়েছেন।’’ বাবার মৃত্যু কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য একটি হাসপাতালে মারা যান পারভীনের আর এক ভাই। একই সঙ্গে মারা যান হাসপাতালের আরও ৬ রোগী। ‘‘আমার ধারণা অক্সিজ়েন শেষ হয়ে যাওয়ায় এতজন মানুষ এক সঙ্গে মারা গিয়েছেন। সংক্রমণ এই ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছতে পারে জেনেও সরকার ভোট করল। এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ’’, বলছেন ক্ষুব্ধ তরুণ।

পঞ্জাবের গ্রামগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে টিকা নেওয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা করছেন, কেই জ্বরে ভুগছেন কি না। তাঁদেরই একজন লুধিয়ানার বলবীর বলেছেন, ‘‘অনেকেই ভয় পেয়ে জ্বরের কথা স্বীকার করছেন না।’’ কুম্ভ মেলার পরে উত্তরাখণ্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ গুন বেড়েছে। ঋষিকেষে একটি বাড়ি নেই, যেখানে কেউ অসুস্থ নন। হরিদ্বারের অবস্থাও একই— জানিয়েছেন স্থানীয় এক ট্যুর অপারেটর নবীন মোহন। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকার আক্রান্তের সংখ্যা লুকোচ্ছে, কিন্তু বাস্তবটা তো আর লুকাতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Corona COVID-19 Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE