বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। এই আবহে আরএসএসের ‘শতবর্ষ যাত্রা’ সম্মেলনে সমাজ গঠন ও নেতৃত্বদানের প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবধারা মেনে চলার পরামর্শ দিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
বিজয়া দশমীর দিন আরএসএসের একশো বছর পূর্তি হতে চলেছে। সেই উপলক্ষে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে চারটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে আরএসএস। যার মধ্যে আজ প্রথম সম্মেলনটি শুরু হয় দিল্লিতে। তিন দিনের ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ভাগবত। সমাজ গঠনে গুরুত্ব দিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। রবীন্দ্রনাথের ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধ সকলকে পড়ে দেখার পরামর্শ দিয়ে ভাগবত বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন কেবল রাজনীতির মাধ্যমে সমাজের জাগরণ সম্ভব নয়। এর জন্য স্থানীয় নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘স্থানীয় নেতৃত্ব, যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নায়ক হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ...যাঁর চরিত্র স্বচ্ছ, যাঁর সমাজের সঙ্গে নিরন্তর সম্পর্ক রয়েছে, সমাজ যাঁকে বিশ্বাস করে এবং যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত-এমন ব্যক্তিকেই নায়ক হিসাবে প্রয়োজন—রবীন্দ্রনাথ এমনই বলেছিলেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে গ্রামে গ্রামে অলিগলিতে এমন নায়কের প্রয়োজন রয়েছে। ...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশি সমাজ প্রবন্ধে স্পষ্ট ভাবেএ কথা বলেছেন।’’
আরএসএসের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির মূল অভিযোগ, স্বাধীনতা সংগ্রামে ওই সংগঠনের কোনও ভূমিকা নেই। আজ আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কের দাবি করেন ভাগবত। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে অনুশীলন সমিতির কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছিলেন হেডগেওয়ার। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসেও যোগ দেন। ভগৎ সিংহের সঙ্গী রাজগুরুর নাগপুরে আত্মগোপনের ব্যবস্থাও হেডগেওয়ার করে দিয়েছিলেন।’’ তবে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কটাক্ষ, ‘‘মনে রাখবেন, আরএসএসের সদস্যরা এখনও তিরঙ্গাকে অভিবাদন জানায় না। লোক দেখানোর জন্য তিরঙ্গার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বটে, কিন্তু ওঁদের মনে এক, দেখায় আর এক রকম।’’
গেরুয়া শিবিরের একটি বড় অংশ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সরব। বিরোধীরা যার সমালোচনা করেন। আজ ভাগবত বলেন, ‘‘হিন্দু তাঁরাই, যাঁরা নিজেদের পথকে বিশ্বাসের পাশাপাশি অন্য ধর্মালম্বীদের পথকেও সম্মান জানান। হিন্দু রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতার কোনও সম্পর্ক নেই। হিন্দু রাষ্ট্র মানে কাউকে বাদ দেওয়া বা অন্যদের সঙ্গে বিরোধ নয়। এ দেশে যখন হিন্দু শাসন ছিল, তখন শাসনের প্রশ্নে কোনও বিভেদ ছিল না। ভারতীয় ভূ-খণ্ডে গত ৪০ হাজার বছর ধরে থাকা মানুষের ডিএনএ এক। মিলেমিশে থাকাই আমাদের সংস্কৃতি। বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য রয়েছে। আর সেই ঐক্যের ফসল হল বৈচিত্র্য।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)