সকাল ৬টা। বেজে ওঠে বাড়ির কলিংবেলটি। দরজা খুলে নবনুর সিংহ দেখেন, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এক জন ডেলিভারি বয়। তাঁর হাতে একটি প্যাকেজ! খুলে দেখেন, ওর মধ্যে রয়েছে একটি এয়ার ফ্রায়ার এবং শার্ট। কিন্তু জন্মদিনের উপহার পেয়ে খুশি হতে পারলেন না নবনুর। দু’চোখ জলে ভরে উঠল তাঁর। উপহার প্রেরক আর কেউ নন, তাঁর বাবা। দিন দুয়েক আগেই দিল্লিতে বিএমডব্লিউ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নবনুরের বাবা নভজ্যোৎ সিংহের!
গত রবিবার দিল্লির ধৌলা কুয়াঁয় বিএমডব্লিউর ধাক্কায় মৃত্যু হয় অর্থ মন্ত্রকের উপসচিব নভজ্যোতের। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সন্দীপ কৌর। দু’জনে সকালে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন বাইকে চেপে। রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনাই পাল্টে দিল নবনুরের জীবন। সদ্য তিনি চাকরি পেয়েছেন। অনেক স্বপ্ন চোখে। রবিবার রাতের দুর্ঘটনা সেই সব ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে তাঁর। বাবা ছিলেন তাঁর কাছে বন্ধুর মতোই। নতুন চাকরি পেয়ে বাবা এবং মাকে কিছু উপহারও দেবেন ভেবেছিলেন নবনুর। কিন্তু বাবাকে আর সেই উপহার দেওয়া হল না। তবে মৃত বাবার থেকে জন্মদিনে পেলেন ‘সারপ্রাইজ গিফ্ট’!
নবনুরের বন্ধুরা জানান, নভজ্যোৎ খুবই হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সকলে ‘সারপ্রাইজ গিফ্ট’ দেওয়ার পরিকল্পনা করতেন। পুত্রের ২২তম জন্মদিনের জন্যও ভেবে রেখেছিলেন। সেই মতো অনলাইনে অর্ডারও দিয়েছিলেন। এমন ভাবে অর্ডার দেন, যেন উপহার আসে ঠিক নবনুরের জন্মদিনের সকালে। অর্থাৎ, ১৬ সেপ্টেম্বর। উপহার হাতে পাওয়ার পরে পুত্রের চোখেমুখে যে আনন্দ ফুটে উঠবে, তা দেখেই তৃপ্তি পেতেন নভজ্যোৎ। কিন্তু এ বার তা হল না।
আরও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছেন নবনুর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা। জন্মদিনে পাশে নেই তাঁর দুই ‘বন্ধু’ই। নবনুরের কথায়, ‘‘ওঁরা আমার বাবা-মা হলেও বন্ধুর থেকেও বেশি। সপ্তাহান্তে বাবা-মা দু’জনেই একসঙ্গে ঘুরতে বেরোতেন। গাড়ি নিয়ে বাবা কাজে গেলেও, মাকে নিয়ে যখন বাইরে যেতেন, গাড়ির চেয়ে বাইকই বেশি পছন্দ ছিল বাবার।’’ আর এই বাইকই প্রাণ কেড়ে নিল নভজ্যোতের।