পুরনো তিক্ততা মুছে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করল ভারত এবং কানাডা। গত কালই কানাডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দ নয়াদিল্লি পৌঁছন। আজ তিনি বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে।
প্রথম বৈঠকেই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক শুধরানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থির হয়েছে, দ্রুত ভারত এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এবং আদানপ্রদান শুরু হবে, যা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। মন্ত্রী পর্যায়ে জ্বালানি, দুর্লভ খনিজ, পুর্নব্যবহারযোগ্য শক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করা, যৌথ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটিকে আবার কার্যকর করা, ভারতে আগামী বছর কৃত্রিম মেধা সংক্রান্ত সম্মেলনে কানাডার বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং গবেষকদের যোগ দেওয়ার মতো বিষয়ে কথা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে অনিতার সাক্ষাতের পর কানাডার বিদেশমন্ত্রী বলেন, " এ বছরের গ্রীষ্মে জি-৭ এর ফাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তাকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইন মেনে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংলাপ চালু রেখে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও প্রসারিত করা আমাদের লক্ষ্য।” বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কথায়, "যখন আমরা কানাডার দিকে তাকাই, দেখি আমাদের পরিপূরক এক অর্থনীতি, উদার সমাজ। দীর্ঘমেয়াদি, সুস্থায়ী সম্পর্কের জন্য এগুলি খুবই জরুরি।” তিনি জানান, উভয় পক্ষই কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পারমাণবিক শক্তি, কৃত্রিম মেধা, জ্বালানি এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি করেছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই দিকনির্দেশিকা বাস্তবায়িত হলে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত ক্ষেত্রেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। যে দীর্ঘ যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে কৃষি, প্রযুক্তি, পরিবেশ, কৃত্রিম মেধায় সহযোগিতা ফের শুরু করার দিকনির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কথাও বলা হয়েছে, দু’টি দেশেরই ভিত হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা, আইনের শাসন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা বজায় রাখা।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে 'ভারতীয় এজেন্ট' জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিলেন কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যার জেরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। গত বছরের অক্টোবরে অটোয়ায় নিজ্জর মামলার জেরে কানাডা থেকে হাইকমিশনার-সহ ছয় কূটনীতিককে ভারত ফিরিয়ে এনেছিল। ভারতও কানাডার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। তবে মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বরফ গলতে শুরু করেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)