গ্রেটার নয়ডায় পণের দাবিতে বধূহত্যার ঘটনার পর চার দিন কেটে গিয়েছে। এখনও আতঙ্ক কাটেনি নিহত নিকি ভাটির ছ’বছরের ছেলের। চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখার পর থেকে শুধুই কেঁদে চলেছে সে। কখনও আপন মনে বলছে, ‘মাকে ওরা জ্বালিয়ে দিল!’
অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার পণের দাবিতে নিকিকে বেধড়ক মারধর করেছিলেন তাঁর স্বামী বিপিন ভাটি এবং শাশুড়ি দয়াবতী। অভিযোগ, বিপিন ও তাঁর মা মিলে চুল ধরে টানতে টানতে নিকিকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নিয়ে আসেন। তার পর গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল নিকির ছেলেও। নির্যাতনের পর বাবা ও ঠাকুমাকে মায়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেছিল সে। সেই ঘটনার ভয়াবহতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বছর ছয়েকের খুদে।
আপাতত নিকির পুত্র রয়েছে দাদু ভিখারি সিংহ পায়লার কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘সেই থেকে কেঁদেই চলেছে ও। রোজ সন্ধ্যা হলেই মায়ের জন্য কাঁদছে। কখনও আপন মনে বলছে, মাকে ওরা জ্বালিয়ে দিল।’’ ঘটনার পর দিনও মায়ের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছিল ওই শিশু। সংবাদমাধ্যমের সামনেই স্পষ্ট জানিয়েছিল, কী ভাবে মাকে খুন করেছেন তার বাবা এবং ঠাকুমা। কান্নাভেজা গলায় সে বলে, ‘‘ওরা প্রথমে মায়ের গায়ে কিছু একটা ঢেলে দেয়। তার পর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’’ ঘটনার পর থেকে নিকির বাবা-মা, অর্থাৎ দাদু-দিদার কাছে ঠাঁই হয়েছে তার। বাবা, ঠাকুমা, ঠাকুরদা, জেঠু সকলেই জেলে। এর পর কী হবে নিকির খুদে ছেলের, তাও জানা নেই। তবু নিকির বাবা বলছেন, ‘‘সব হারিয়ে ফেললাম! আর কী বাকি রইল আমার? এখন নাতিকে নিজের সবটুকু দিয়ে বড় করার চেষ্টা করব।’’
আরও পড়ুন:
গ্রেটার নয়ডার ঘটনায় চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন, অর্থাৎ ২২ অগস্ট কাসনা থানায় ভাটি পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই রাত থেকেই ফেরার ছিলেন সকলে। সোমবার ভোরে সিরসা টোল এলাকা থেকে নিকির ভাশুর রোহিতকে গ্রেফতার করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়েন শ্বশুর সত্য বীর। রবিবার সন্ধ্যায় জেআইএমএস হাসপাতালের কাছ থেকে শাশুড়ি দয়াবতীকে ধরা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের গুলিতে আহত ছেলে বিপিনকে দেখতে লুকিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মা। পথে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, বিয়েতে স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ টাকা, সোনা— নানা উপহার দেওয়া সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুশি ছিলেন না। আরও পণ চেয়ে প্রায়ই নিকি ও তাঁর দিদিকে মারধর করা হত বলে দাবি। নিকির দিদি কাঞ্চনও একই পরিবারের বৌ। তাঁর দাবি, ৩৬ লক্ষ টাকা যৌতুক না পাওয়ায় তাঁর চোখের সামনেই বোনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।