পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতির ‘কপিরাইট’ নিতে চায় ওড়িশা সরকার। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন পুরীর সাম্মানিক রাজা তথা জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব। সম্প্রতি পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দিঘাতেও একটি জগন্নাথ মন্দির তৈরি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে ‘জগন্নাথধাম’ বলা হচ্ছে, যা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছে ওড়িশা সরকার। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি এ নিয়ে মমতাকে চিঠিও লিখেছিলেন। এ ছাড়াও ইসকনের বেশ কিছু কাজে আপত্তি তোলা হয়েছে পুরী থেকে। এর পরে ‘কপিরাইট’ দাবি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের পূজাচার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস)। ‘ধাম’ শব্দের অর্থ আবাসস্থল। দিঘার মন্দিরকে কেন ‘জগন্নাথ ধাম’ বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ওড়িশা সরকার ছাড়াও এতে আপত্তি জানিয়েছেন পুরী গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এবং ভক্তদের অনেকে। পুরীর কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা প্রাচীন ঐতিহ্যের লঙ্ঘন। তাই এটা হওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি জগন্নাথের রথযাত্রা এবং স্নানযাত্রা নিয়ে ইসকনও বিতর্কে জড়িয়েছে। অভিযোগ, পুরীতে যে দিনক্ষণ মেনে রথযাত্রা, স্নানযাত্রা পালন করা হয়, বিদেশে ইসকন সে সব মানছে না। ইচ্ছামতো দিনে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি পালন করছে। এতে জগন্নাথভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত লাগছে বলে দাবি দিব্যসিংহের। তিনি বলেন, ‘‘যখন-তখন ইসকন রথযাত্রা, স্নানযাত্রা পালন করছে। দিঘার মন্দিরকে জগন্নাথধাম বলে ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো তো প্রত্যেক জগন্নাথভক্তের কাছে উদ্বেগের বিষয়। আমাদের পবিত্র সংস্কৃতি, প্রাচীন ঐতিহ্যকে এ ভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা মায়াপুরের সঙ্গেও কথা বলেছি। আলোচনা চলছে।’’ পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার মায়াপুরে রয়েছে ইসকনের সদর দফতর। সারা বিশ্বে কখন কী ভাবে কোন অনুষ্ঠান পালিত হবে, মায়াপুর থেকেই তা স্থির করা হয়।
আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে ওড়িশা সরকার কি পুরীতে জগন্নাথের পূজাচারের কপিরাইট নেওয়ার কথা ভাবছে? দিব্যসিংহ বলেন, ‘‘সরকার তো ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরুও করে দিয়েছে। এটা আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবে। তার পর যা করার করবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে ওড়িশা সরকারের ‘ধাম’ বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা রাখছি, দুই রাজ্যের সরকার আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে নেবে। যদি তা করা যায়, সব বিতর্ক এখানে থেমে যাবে। কিন্তু যদি তা না হয়, আমাদের অন্য ভাবে দেখতে হবে। যে করেই হোক, নিয়ম-ঐতিহ্যের লঙ্ঘন আটকাতে হবে।’’