তিপ্রার সভায় প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নামছে সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি) এলাকায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ ডেকেছে প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মনের দল। তাদের দাবি একটাই— জনজাতি অধ্যুষ্যিত নির্দিষ্ট এলাকাকে পৃথক ‘তিপ্রাল্যান্ড’ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। লোকসভা ভোটের আগে মথার এ হেন বন্ধের পথে হাঁটা রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির জন্য ‘চাপ’ বলেই মনে করছেন অনেকে।
তিপ্রা মথার নেতা তথা ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ওই দিন এডিসি এলাকায় সর্বাত্মক বন্ধ হবে।’’ প্রশাসন যদি বাধা দেয়? অনিমেষের সাফ জবাব, ‘‘তার মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয় জানা আছে। যা করা দরকার তা-ই করা হবে।’’
কিন্তু শাসক বিজেপি কী বলছে? পূর্ব ত্রিপুরার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই বন্ধ বিজেপির কাছে কোনও চাপের নয়। আসলে তিপ্রা নিজেদের দলের ভাঙন ঠেকাতে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের কথা বলে ওদের পার্টি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে ইস্তাহারে সে কথা ওরা উল্লেখ করেনি। জনজাতি অংশের চেয়ে বাঙালি অংশের প্রার্থী বেশি ছিল। ফলে ওদের দলের মধ্যেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তাই এই বন্ধের ডাক।’’
পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনটিতে অধিকাংশই জনজাতি ভোটার। গত লোকসভায় বিপুল ভোটে সেখানে জিতেছিল বিজেপি। সেই সময় অবশ্য জনজাতিদের অন্য একটি দল আইপিএফটির সমর্থন ছিল তাদের সঙ্গে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই দলটি কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে। জনজাতিদের নতুন দল হিসাবে মাথা তুলেছে তিপ্রা মথা। ২০২০ সালের শেষে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে এই নতুন দল গড়েছিলেন প্রদ্যোৎকিশোর। কয়েক মাসের মধ্যে এডিসি ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তিপ্রা। রাজবাড়ির আবেগ জনজাতি অংশকে কার্যত চুম্বকের মতো টেনে নিয়েছিল। অনেকের মতে, অঙ্কই বলছে তিপ্রা শক্তিশালী হলে পূর্ব ত্রিপুরায় বিজেপির ‘চাপ’ বাড়বে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ এমনও বলছেন, তিপ্রার রাজনৈতিক স্থিরতা নেই। অবস্থানও শক্তপোক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি লোকসভার আগে প্রদ্যোতের সঙ্গে কথা বলে বনিবনা করে নেন, তা হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
অনেকে আবার তৃতীয় একটি সম্ভাবনার কথাও বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি ভালই জানে তাদের শরিক আইপিএফটির কোনও শক্তি নেই। পুরোটাই এখন তিপ্রায় ঢুকে গিয়েছে। ফলে গেরুয়া শিবির চাইবে তিপ্রার সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া করতে। পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই। তবে লোকসভার আগে জনজাতিদের মধ্যে যে তিপ্রা নিজেদের আগ্রাসী ভূমিকায় তুলে ধরতে চাইছে, তা এই বন্ধের ডাকের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy