—প্রতীকী ছবি।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— দেশের আইন-শৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়া তিনটি বিল নিয়ে বিজেপি শিবিরের তাড়াহুড়ো দেখে আপত্তি তুলল বিরোধী শিবির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এক সপ্তাহের নোটিসে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাইছে। বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের একাধিক সাংসদ এ নিয়ে ধীরেসুস্থে এগোনোর দাবি তুলেছেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, বিজেপির সাংসদ ব্রিজলাল আগামী সপ্তাহ থেকেই এই বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা দাবি তুলেছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে আরও সময় প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রেও ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেই এগোচ্ছেন।
বিরোধীদের এই সমন্বয়ের ছবিটা আজও আরও স্পষ্ট হয়েছে সংসদে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে। এ দিন সংসদের সেন্ট্রাল হলে তাঁর ছবিতে মাল্যদান অনুষ্ঠানে যান কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। কংগ্রেস ছেড়ে সপা-র সমর্থনে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া কপিল সিব্বলও ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। সে সময় সনিয়া আলাদা করে সিব্বলকে নাম ধরে ডেকে নিজের পাশে বসান। তার পরে ইউপিএ সরকারের আমলের আইনমন্ত্রী সিব্বলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ এই তিন আইন নিয়ে আলোচনা করেন। এই তিন বিল সংসদে পেশ হওয়ার পরেই এগুলিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিযোগ করে সিব্বল বলেছিলেন, প্রস্তাবিত তিনটি আইনই বিচারবিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। মোদী সরকার যে দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে চায় না, তা স্পষ্ট। সে সময় কংগ্রেসও অভিযোগ করেছিল, রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ তুলে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুধু তা ফিরিয়ে আনছেন না, রাষ্ট্রদ্রোহের সংজ্ঞা এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে তার যথেচ্ছ অপব্যবহার করা যায়। এ দিন সনিয়ার সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার সিব্বলের দীর্ঘ কথোপকথনে স্পষ্ট, বিরোধী শিবির এই তিন আইনের বিরোধিতায় এককাট্টা হতে চাইছে।
বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষ দিনে আচমকাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ফৌজদারি দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং সাক্ষ্য আইনের বদলে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করার জন্য তিনটি বিল বেশ করেন। বিলগুলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন বিজেপি শিবির চাইছে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে তিনটি বিল নিয়ে স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট পেশ করুক। সে ক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে, এ বছরের শেষে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তিনটি বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যায়। আর সে কারণেই আগামী ২৪ অগস্ট থেকে টানা তিন দিন এই বিল নিয়ে আলোচনার জন্য স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল।
এখানেই বেঁকে বসেছেন বিরোধী সাংসদেরা। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ১৮ অগস্ট নোটিস পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ২৪, ২৫ ও ২৬ অগস্ট তিনটি বিল নিয়ে বৈঠক হবে। মাত্র কয়েক দিন পরেই। এত সুদূর প্রভাবী বিল নিয়ে আলোচনায় বসার আগে হাতে বেশি সময় থাকছে না। তাই চলতি মাসের বদলে সেপ্টেম্বরে বৈঠর ডাকা হোক। এমনিতেই সংসদের অধিবেশন সবে মাত্র শেষ হয়েছে। ফলে সাংসদদের নিজের এলাকায় বা রাজ্যে অনেক অনুষ্ঠান, বৈঠক রয়েছে। বিরোধী শিবিরের সাংসদদের বক্তব্য, এই সব বিলের মাধ্যমে মোদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ঘুরপথে ফেরাচ্ছে। পুলিশের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে। ফলে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা দরকার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। তা না করে বিজেপি তড়িঘড়ি স্থায়ী কমিটির সিলমোহর আদায় করে নিতে চাইছে। বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, তাঁদের আপত্তি সত্ত্বেও যদি চলতি মাসেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিল তিনটি নিয়ে আলোচনা করে বিজেপি বুলডোজ়ার চালাতে চায়, তা হলে সেই অনুযায়ী পরবর্তী রণকৌশল ঠিক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy