পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও মজবুত করতে চতুর্দেশীয় সফরে বেরিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তুরস্ক, ইরান, আজ়ারবাইজানের পর তাজিকিস্তানে যান তিনি। বৃহস্পতিবার সে দেশের রাজধানী দুশানবে-তে তাজিক প্রেসিডেন্ট এমোমালি রাহমোনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা হয়। পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাজিকিস্তানেও ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ ঠোকেন শাহবাজ়।
প্রতিবেদন অনুসারে, তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন শাহবাজ়। সেই সূত্রেই পাক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, গত ৭ মে-র পর থেকে ভারতের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অনৈতিক’ কার্যকলাপ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করে। প্রসঙ্গত, ৭ তারিখ রাতে পাক এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারত।
তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গও তোলেন শাহবাজ়। দাবি করেন যে, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত, পাকিস্তান এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলেছে। সম্প্রতি এই ‘সমস্যা’ নিরসনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভারত বরাবরের মতোই জানিয়ে এসেছে যে, কাশ্মীর নিয়ে তারা কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় না।
‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট রাহমোন পাকিস্তানকে ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ বলে আখ্যা দেন। তার পর গত মে মাসে ভারত-পাক সংঘাত নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেন। ইসলামাবাদের দাবি, সংঘাত থামিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং গোটা এলাকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখার জন্য তিনি শাহবাজ়ের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। পাকিস্তানে আরও বিনিয়োগ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
গত রবিবার চতুর্দেশীয় সফরে প্রথমে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ তুরস্কে গিয়েছিলেন শাহবাজ়। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘ইস্তানবুলে আমার প্রিয় ভাই (রিচেপ তায়িপ) এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠক হল। ভারত-পাক সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানের জন্য ওঁর দৃঢ় সমর্থন ছিল। তার জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। পাকিস্তানিদের তরফে তুরস্কের ভাইবোনেদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’’ এর্দোয়ানও সমাজমাধ্যমে শাহবাজ়ের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পোস্ট করেন। লেখেন, ‘‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং আমার খুব ভাল বন্ধু শাহবাজ় আর তাঁর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইস্তানবুলে বৈঠক হল। আমরা খুব খুশি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিশেষত অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং নিরাপত্তার কথা আলোচনায় উঠে এসেছে। পাকিস্তান এবং তুরস্কের মধ্যে যে ঐতিহাসিক, মানবিক এবং রাজনৈতিক বন্ধন রয়েছে, তা আগামী দিনে আরও দৃঢ় করে তুলব আমরা।”
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে তুরস্ক এবং আজ়ারবাইজান— এই দুই দেশ সরাসরি পাকিস্তানকে ‘সমর্থন’ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরেই দু’টি দেশে বেড়াতে যাওয়ার বুকিং হু হু করে বাতিল করতে থাকেন ভারতের পর্যটকদের একাংশ। দু’টি দেশের অর্থনীতিতেই পর্যটনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘পাক সমর্থক’ ওই দুই দেশকে এড়িয়ে চলার কৌশল নেন ভারতের ভ্রমণপিপাসুরা। অবশ্য পাকিস্তানের এই ‘বন্ধুরাষ্ট্র’গুলির মধ্যে ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ মসৃণ।