Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Parliament Security Breach

চাকরি না থাকার হতাশাই কারণ, দাবি বিরোধীদের

বিরোধী শিবিরের নেতারা যখন এ কথা বলছেন, তখন বিজেপি শিবির বুধবারের সংসদের ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেস, বাম তথা বিরোধী শিবিরের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

parliament security breach

হলুদ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে সংসদ ভবন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০৮
Share: Save:

কারও পাকা চাকরি নেই। কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বসে রয়েছেন। কারও ঝুলিতে প্রচুর ডিগ্রি থাকলেও ঠিক মতো চাকরি পাননি। কেউ অনেক বার পুলিশ বা সেনায় চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

সংসদে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুই যুবক জুতোয় স্মোক গ্যাস ক্যানিস্টার নিয়ে ঢুকে পড়ার পরে বিরোধী শিবির মনে করছে, মোদী সরকারের দশ বছরে আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জেরে জনমানসে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা-ই ক্ষোভই প্রতিবাদের আকারে সংসদে উঠে এসেছে। বেকারত্ব, ছোট-মাঝারি শিল্পের সঙ্কট, সরকারি চাকরির সুযোগ কমে যাওয়া, আয় কমে যাওয়া, মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক বৈষম্যের মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে এই ‘নৈরাজ্য’ আরও বাড়বে।

বিরোধী শিবিরের নেতারা যখন এ কথা বলছেন, তখন বিজেপি শিবির বুধবারের সংসদের ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেস, বাম তথা বিরোধী শিবিরের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির দাবি, যত তদন্ত এগোবে, তত কংগ্রেস-কমিউনিস্ট আঁতাঁত, ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় অংশ নেওয়া, সরকার-বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগসূত্র স্পষ্ট হবে। পাল্টা যুক্তিতে কংগ্রেস বলেছে, বিজেপি আসলে দু’টো বিষয় থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। এক, সংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল। দুই, যাঁরা লোকসভায় স্মোক গ্যাস ক্যানিস্টার নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন, তাঁরা বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার সুপারিশে সংসদে ঢুকেছিলেন।

বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষের বক্তব্য, ‘‘সংসদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। যাদের গাফিলতি হয়েছে, তাদের শাস্তি হবে। কিন্তু সংসদের ঘটনার বাইরে আবার একটি বিরোধীদের মদতে পুষ্ট গ্যাংয়ের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, যারা দেশের নেতৃত্বকে খাটো করতে চাইছে, অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। এখনও পর্যন্ত যে সব তথ্য মিলছে, তাতে স্পষ্ট, সংসদ-কাণ্ডে অভিযুক্তেরা প্রশিক্ষিত চরমপন্থী। তাঁরা একটা কাণ্ড ঘটানোর সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের যোগাযোগ খুব ভাল ছিল। পিছনে মদত ছিল।’’

বুধবার লোকসভায় যিনি প্রথম ঢুকে পড়েছিলেন, সেই ২৭ বছরের সাগর শর্মার পরিবারের লোকেরা বলেছেন, লখনউয়ের বাসিন্দা সাগর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতে গমকলে কাজ করতেন। কোভিডে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তার পরে ছোটখাটো কাজ করতেন। শেষে ই-রিকশা চালাতেন। লোকসভায় স্মোক গ্যাস ক্যানিস্টার নিয়ে আসার আগে সাগর সোশাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘জিতে ইয়া হারে, পর কোশিশ তো জরুরি হ্যায়। অব দেখনা ইয়ে হ্যায় সফর কিতনা হাসিন হোগা। উমিদ হ্যায় ফির মিলেঙ্গে।’ সাগরের সঙ্গী ৩৪ বছরের ডি মনোরঞ্জন বেঙ্গালুরু থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করলেও বাবার সঙ্গে চাষ-আবাদের কাজ করতেন। সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখানো হরিয়ানার নীলম আজাদ ওরফে নীলম বর্মা এমএ, বিএড, এমএড পাশ করলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাজ পাননি। নীলমের সঙ্গী ছিলেন মহারাষ্ট্রের ২৫ বছরের অমল শিন্দে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া করা অমল সেনা, পুলিশে চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গোটা ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন।

আজ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, জনমানসের ক্ষোভ সংসদে প্রতিবাদের মাধ্যমে উঠে এসেছে। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, দেশের একটা বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। তাঁদের হাতে কাজ না থাকলে ক্ষোভ প্রতিফলিত হবেই। এত দিন জনসংখ্যায় এই তরুণ প্রজন্মকেই অর্থনীতির সব থেকে বড় শক্তি বলে মনে করা হত। কিন্তু তাঁদের হাতে রোজগার তুলে দিতে না পারলে এই চাকরিপ্রার্থীরাই সামাজিক দায় হয়ে উঠবেন। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘এত দিন যারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলতেন, তাঁরা কোথায়? ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি কোথায়? নতুন ভারতের এই দায় কে নেবে? যত ক্ষোভ দমনের চেষ্টা হবে, তত নৈরাজ্য তৈরির প্রবণতা দেখা যাবে।’’

পাল্টা অভিযোগে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়র যুক্তি, ‘‘নীলমের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ও ‘ইন্ডিয়া’র কিছু শরিক দলের যোগাযোগ মিলেছে। মনোরঞ্জনের বাবা বলেছেন, ওর মাথায় কেউ উল্টোপাল্টা চিন্তাভাবনা ঢুকিয়েছিল। তারা কারা? কারা মনোরঞ্জনের বারবার দিল্লি যাত্রার টিকিট জোগাড় করত? এদের সঙ্গে কী ভাবে বাকিদের যোগাযোগ হল? কারা এদের নিয়ে একটি দল তৈরি করল? যত তথ্য সামনে আসবে, ততই কংগ্রেস-কমিউনিস্ট আঁতাঁতের ডিএনএ স্পষ্ট হবে।’’ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ তার উত্তরে বলেন, ‘‘বিজেপির আইটি সেল আসলে দু’টো তথ্য থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। এক, সংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর লঙ্ঘন হয়েছে। দুই, যারা লোকসভায় ঢুকেছিল, বিজেপি সাংসদই তাদের সংসদে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE