প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে গড়ে তোলা নয়াদিল্লির প্রথম অভিন্ন কেন্দ্রীয় সচিবালয় (সিসিএস) ভবনটির আজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ভবনের পোশাকি নাম ‘কর্তব্য ভবন-৩’। রাজধানীতে কর্তব্য পথের দু’ধারে ১০টি ‘কর্তব্য ভবন’ গড়ে তোলার কথা রয়েছে। তারই প্রথমটির আজ উদ্বোধন করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর মতে, ওই ভবনগুলি তৈরি হলে সরকারের বাড়িভাড়া বাবদ প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বাঁচবে। আজ তিনি বলেন, ‘‘এই ভবনগুলি থেকেই আধুনিক ভারতের বিকাশের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
কর্তব্য ভবন ৩ নম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, কর্মিবর্গ দফতর, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতার দফতর রয়েছে। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হলেও দিন কয়েক আগেই স্বরাষ্ট্র-সহ একাধিক মন্ত্রক ওই নতুন ভবনে কাজ শুরু করে দিয়েছিল।
যদিও তার ফলে এক অন্য জটিলতাও দেখা দিয়েছে। সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস ফোরাম (সিএসএস)-এর তরফে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে লেখা একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন ভবনে পদস্থ আমলাদের আলাদা ঘর বরাদ্দ করা হয়নি। তাঁদের খোলা জায়গায় কাজ করতে হচ্ছে, যা গোপনীয়তার প্রশ্নে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রায় ১৩ হাজার কেন্দ্রীয় কর্মচারীর ওই সংগঠন লিখেছে, যুগ্মসচিব পর্যায়ের অফিসারদের কাছে বিভিন্ন গোপন ফাইল, বিশেষত স্পর্শকাতর মামলা সংক্রান্ত ও রাষ্ট্রের সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল থাকে। সেগুলি রাখার জন্য ব্যক্তিগত স্থানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন সচিবালয়ের দফতরে সেই অফিসারদের খোলা জায়গায় বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে ফাইলের গোপনীয়তা যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনই ওই অফিসারদের সঙ্গে তাঁদের শীর্ষ কর্তাদের টেলিফোনে হওয়া আলোচনারও গোপনীয়তা ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে কর্মীদের ওই সংগঠন। তাই নয়া ভবনে বর্তমানে বসার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা পাল্টে ফেলা এবং বিশেষত পদস্থ অফিসারেরা যাতে কেবিন পান, তা নিশ্চিত করতে কর্মীদের সংগঠনের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে।
আজ বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ নয়া ভবন উদ্বোধনের পরে সেই উপলক্ষে সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন মোদী। সেখানে বর্তমান সরকারি ভবনগুলির দুর্দশার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ গত একশো বছর ধরে নর্থ ব্লক থেকে হয়ে চলেছে। ওই ভবনে না পর্যাপ্ত স্থান ছিল, না ছিল যথেষ্ট আলো-বাতাস। সেই কারণে নতুন ভবনগুলি তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া দিল্লিতে একাধিক সরকারি দফতর কাজ করত ভাড়ার ভবন থেকে। তার জন্য সরকারকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ভাড়া দিতে হত।এ বার সেই অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনই এক ভবনের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রক চলে আসায় যাতায়াতের খরচের পাশাপাশি যানজটও উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)