পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে ভোটমুখী বিহারের জনসভা থেকে ওই ঘটনার বদলা নেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে এ মাসের শেষ সপ্তাহে ফের বিহারের রোহতাসে জনসভা করবেন তিনি। বিরোধীদের মতে, সীমান্তে সংঘাত কমতেই এ বার পাকিস্তানের উপর হামলা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎপর হতে শুরু করেছে বিজেপি। পাশাপাশি, বিহারের ভোটপ্রচারে ওই হামলাকে মূলধন করে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলার চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে নির্বাচনী বৈতরণী অনায়াসে পার হতে পারে এনডিএ।
গত মঙ্গলবার মাঝ রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তানে থাকা জঙ্গিদের ন’টি ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। বিষয়টি নিয়ে পরের দিন থেকেই প্রচারে নেমে পড়ে বিজেপি। পরে দু’শিবিরের সংঘাতে ভারতীয় সেনা সাফল্যকে পুঁজি করে পথে নেমে প্রচার শুরু করে পদ্মশিবির। ওই অভিযানকে দলীয় নীতির সাফল্য বলে প্রচার চালায় বিজেপি। রাজনীতিকেরা মনে করছেন, পুলওয়ামা হামলাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে পেরেছিলেন মোদী। এ বারে বিহারে ভোটের আগে ঠিক সে ভাবেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও পাকিস্তানে হামলা চালানো নিয়ে দেশে জাতীয়বতাবাদের হওয়া ও মেরুকরণের রাজনীতিতে নামার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই বিষয়টি তাজা থাকতে বিহার সফরের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর। যাতে এখন থেকেই এনডিএ-র পক্ষে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলা সম্ভব হয়। যার সুফল ভোটের বাক্সে আশা করছে গেরুয়া শিবির।
কিন্তু সংঘাত থামাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নিয়ে সরব বিরোধীরা। কেন ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষ হিসাবে আমেরিকা মাথা ঘামাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মোদীর সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তুলনা টেনে আক্রমণে নামেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই আজ সাফাই দিতে মাঠে নামে বিজেপি। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র আজ অভিযানের যাবতীয় কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ওই ঘটনার পরেই প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশোধস্পৃহা কতটা মারাত্মক, তা শত্রুর কল্পনারও বাইরে ছিল।’’ পাশাপাশি, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আজ ঘুরিয়ে তার জবাব দেন মোদী। বলেন, ‘‘বিশ্বকে জানাতে চাই, আমাদের ঘোষিত নীতিই হল পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হলে তা কেবল সন্ত্রাস নিয়েই হবে। কিংবা পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই হবে।’’ রাজনীতিকদের মতে, আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে যে অস্বস্তিতে পড়েছে দল, তা দূর করতেই আজ ওই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)