দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইকে ‘জুতো’ ছুড়ে মারার চেষ্টার ঘটনার নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। সেই কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে এই ধরনের নিন্দনীয় কাজের কোনও জায়গা নেই।’’ একই সঙ্গে ঘটনার সময় দেশের প্রধান বিচারপতির ভূমিকারও প্রশংসা করেন মোদী।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিষয়টি নিজেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে জানান মোদী। প্রধান বিচারপতির কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে তাঁর উপর হামলা প্রত্যেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’
সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন আচমকাই এক বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রধান বিচারপতির দিকে কিছু ছুড়ে মারার চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানান, ওই আইনজীবী জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, একটি কাগজের বান্ডিল ছুড়ে মারার চেষ্টা হয়েছে। তবে এজলাসে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতায় ধরে ফেলা হয় ওই আইনজীবীকে। তাঁকে যখন বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছিলেন ওই আইনজীবী। তিনি বলছিলেন, “সনাতন ধর্মের অপমান সহ্য করব না।” পরে জানা যায়, ওই আইনজীবীর নাম রাকেশ কিশোর। সোমবার সকালের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর ওকালতির লাইসেন্স নিলম্বিত করে দেয় বার কাউন্সিল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যায়। তবে এত কিছুর পরেও শান্ত এবং স্থির থাকেন প্রধান বিচারপতি। নিরাপত্তাকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরে অন্য আইনজীবীদের নিজেদের সওয়াল চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তিনি। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই সব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা বিভ্রান্ত নই। এ সব ঘটনা আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।”
আরও পড়ুন:
ঘটনার সময় প্রধান বিচারপতির এই শান্ত থাকার বিষয় নিয়ে নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। এ বার এই বিষয়টি তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতির মুখে বিচারপতি গবই যে শান্ত মনোভাব দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃত়জ্ঞ। তা ন্যায়বিচারের মূল্যবোধের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।’’
সোমবারের এই ঘটনার নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বর্তমানে তিনি উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। সেখান থেকেই প্রধান বিচারপতির উপর হামলার চেষ্টার ঘটনার নিন্দা করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। কার্যত ভারতের সংবিধানের উপর হামলা।’’ শুধু মমতা নন, একই ভাষায় ঘটনার নিন্দা করেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণের নিন্দা করার কোনও শব্দ নেই। এটি কেবল তাঁর উপরই নয়, আমাদের সংবিধানের উপরও আক্রমণ।’’ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।