বিহারের বিধানসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নজরে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর (ওবিসি) ভোট। শুক্রবার সমস্তিপুরে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের গ্রাম থেকে দ্বিতীয় দফার প্রচার কর্মসূচি শুরু করলেন তিনি। মোদীর সঙ্গে ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার এবং কর্পূরীর পুত্র তথা বিহারের জেডিইউ মন্ত্রী রামনাথ ঠাকুর।
কর্পুরীর জন্মস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে সমস্তিপুরেরই দুধপুরায় জনসভা করেন মোদী। এর পরে বেগুসরাইয়ে বিজেপির প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দিতে যান। প্রসঙ্গত, ১৯৭০-৭১ এবং ১৭৭৭-৭৯, দু’দফায় বিহারে কংগ্রেস বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর নেতা কর্পূরী। ১৯৭৮ সালে জনতা পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনিই প্রথম বিহারে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনতা-জমানাতেই গঠিত হয়েছিল মণ্ডল কমিশন। যাকে হাতিয়ার করে হিন্দিবলয়ে রাজনৈতিক উত্থান লালুপ্রসাদ, নীতীশ, মুলায়ম সিংহ যাদব, শরদ যাদবদের।
গত বছর লোকসভা ভোটের আগে কর্পূরীকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অনগ্রসর ভোটব্যাঙ্কই এ বার তাঁর লক্ষ্য। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর জাতগণনার প্রতিশ্রুতির জবাবে মোদী বার বার নিজের ‘ওবিসি পরিচয়’ তুলে ধরেছেন। এ বারের বিধানসভা ভোটেও সেটি তাঁর অন্যতম প্রচারকৌশল হতে চলেছে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার লালু-রাবড়ির জমানায় ‘দুর্নীতি এবং জঙ্গলরাজে’র অভিযোগও তুলেছেন। সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দিল্লির আদালতে লালু, তাঁর স্ত্রী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই নেতারা জামিন পেয়েছেন বলে এখনও বাইরে রয়েছেন।’’ সেই সঙ্গে আরজেডির প্রতীকচিহ্নকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন অনেক আধুনিক সরঞ্জাম এসে গিয়েছে। লন্ঠনের আর প্রয়োজন হয় না।’’
বিধানসভা ভোট ঘোষণার আগে বিহারে ধারাবাহিক ভাবে সরকারি এবং দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন মোদী। কিন্তু শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার বিরোধী জোট ‘মহাগঠবন্ধনে’র বৈঠকে লালু-পুত্র তেজস্বীকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করে হয়েছিল। বিহারে এনডিএ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নীতীশের নাম ঘোষণা না-করার খোঁচাও দিয়েছিলেন তেজস্বী। কিন্তু মোদী শুক্রবার কার্যত সেই বিতর্কে জল ঢেলে দিয়ে বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিধানসভা ভোটে জয়ের নতুন নজির গড়বে এনডিএ।’’ মাঝের কয়েক বছর বাদ দিলে প্রায় দু’দশক ধরে বিহারে ক্ষমতা ধরে রেখেছে এনডিএ। জোট বদলে বারে বারে নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। মোদী শুক্রবার বিহারে ‘জঙ্গলরাজের অবসান’ এবং উন্নয়নের জন্য নীতীশকে কৃতিত্ব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এ বারের মেয়াদেও তাঁকেই পটনার কুর্সিতে চাইছে বিজেপি।