কার্গিলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেজর অমিত কুমার। নিজস্ব চিত্র।
এ যাত্রায় কার্গিল।
গত কয়েক বছরের মতো এ বারও দীপাবলিতে সীমান্তের সেনাশিবিরে উপস্থিত থাকবেন বলে আজ সকালে লাদাখের কার্গিলে উড়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আসন্ন হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাত নির্বাচনের আগে কার্গিলে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়তাবাদের বার্তা দিতে চেয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে।
আট বছর আগে, ২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে সিয়াচেনে সেনাদের সঙ্গে দীপাবলি পালন করেছিলেন মোদী। মাঝে কোভিড সংক্রমণের কারণে দু’বছর বাদ দিলে বাকি বছরগুলিতে সেই প্রথা বজায় রেখেছেন তিনি। এ বারে তাঁর কার্গিল সেনা ছাউনি বেছে নেওয়াও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে ভারতের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। সে সময়ে কার্গিল জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও, বর্তমানে তা কেন্দ্রশাসিত লাদাখের অন্তর্গত। যে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার একাধিক স্থানে বছর দু’য়েক ধরে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-চিন সেনা। ফলে অনেকের ধারণা আজ লাদাখ যাত্রার মাধ্যমে একই সঙ্গে প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তানকে বার্তা দিতে চেয়েছেন মোদী। বিশেষত সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে বার্তা দিতে দীপাবলির উৎসবের তাৎপর্যকে তুলে ধরেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দীপাবলির অর্থ হল সন্ত্রাসের সমাপ্তি। আর কার্গিলই তা করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এই কার্গিলেই আমাদের সেনারা সন্ত্রাসকে শেষ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।’’ এর পরেই পাকিস্তানের নাম করে মোদী বলেন, ‘‘এমন কোনও যুদ্ধ হয়নি যেখানে পাকিস্তান কার্গিলে ভারতের হাতে পরাজিত হয়নি।’’
ভোটমুখী গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে জিততে হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের তাসেই ভরসা রেখেছে বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনীতিকদের মতে, গত কয়েক দিন কেদারনাথ, বদ্রীনাথ ও অযোধ্যা ঘুরে চড়া সুরে হিন্দুত্বের প্রচার চালানোর পরে আজ দীপাবলি উৎসব কার্গিলে কাটিয়ে জাতীয়তাবাদের বার্তা ভোটমুখী রাজ্যে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মোদী। সেনাদের তাঁর নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে মোদী বলেন, ‘‘কার্গিলে পরিবারের বীর জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি কাটানোর সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। আপনারা সীমান্তে রয়েছেন বলেই দেশের প্রতিটি নাগরিক শান্তিতে ঘুমোতে পারেন।’’ দেশের সীমান্তে যেমন সেনারা বাইরের শত্রুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন তেমনই তাঁর সরকার দেশের ভিতরের শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত রয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা যতই প্রতিপত্তিশালী হোন না কেন, কেউ ছাড়া পাবেন না। এক সময়ে নকশালবাদের সমস্যা দেশের বড় অংশকে গ্রাস করেছিল। এখন নকশাল সমস্যাকে অনেকটা দূর করা গিয়েছে।’’
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি নিয়েও মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কার্গিলের বেস ক্যাম্পে সেনাদের মধ্যে খাবার বিতরণের সময়ে কার্গিল যুদ্ধের ছবি দেখেছি। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সুফল পাচ্ছেন সেনারা। তাঁরা ফরোয়ার্ড পোস্ট থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ছুটিতে সহজে বাড়ি যেতে পারেন।’’ সম্প্রতি ৩৬টি উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর রকেটের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এমন খবর শুনলে গর্বে বুক ফুলে ওঠে। ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হচ্ছে। সব দেশ ভারতকে সম্মান করে।’’
কার্গিলের মাটিতে দাঁড়িয়ে শক্তি প্রদর্শন যে জরুরি, কৌশলে প্রতিবেশী দেশকে তা জানাতে ভোলেননি মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশ বরাবরই যুদ্ধের বিরুদ্ধে। লঙ্কা হোক বা কুরুক্ষেত্র –সব ক্ষেত্রেই যুদ্ধ ছিল শেষ বিকল্প। ভারত বরাবারই বিশ্ব শান্তির প্রশ্নে সওয়াল করে এসেছে। যে কোনও আগ্রাসন হোক বা সংঘর্ষ, আমরা তার বিরোধিতা করি। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে শক্তি ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়।’’ এর পরেই চিন-পাকিস্তানের নাম না করে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের বাহিনী সব দিক থেকে সক্ষম। সেনাবাহিনী জানে যারা উত্তেজনা ছড়াতে চায় তাদের কী ভাবে যোগ্য জবাব দিতে হয়।’’ জাতীয়তাবাদের ওই বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা আদৌ ভোটমুখী রাজ্যে কোনও প্রভাব ফেলে কি না তাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy