অপারেশন সিঁদুর ও তার পাল্টা পাকিস্তানি হামলায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শয়ে শয়ে গ্রাম বিধ্বস্ত। গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই সব এলাকা ঘুরে যা দেখেছেন, সেই ছবি মর্মান্তিক।
জানা গিয়েছে, পাকিস্তানি হামলায় ১০ হাজারেরও বেশি বাড়ি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। ঘরছাড়া অসংখ্য পরিবার। সীমান্তবর্তী পুঞ্চ, কুপওয়ারা, বারামুলা ও রাজৌরির গ্রামগুলি সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত। তার মধ্যে সব থেকে শোচনীয় অবস্থা জম্মুর পুঞ্চ জেলার। পাকিস্তানি হামলায় নিহত ২২ জন সাধারণ মানুষের মধ্যে ১৪ জন পুঞ্চের। ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ আজাজ় জান জানান, এই জেলার ৯০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬০টিতে হাজার হাজার বাড়ি ও ভবন গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এত বড় মাপের হামলা এর আগে এই এলাকায় হয়নি। পুরো এলাকায় একটিও বাড়ি দাঁড়িয়ে নেই। পাহাড়ি এলাকায় টিনের চালের বাড়ি কি এই হামলা যুঝতে পারে! শেল ফেটে যে একটা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা নয়, শ্র্যাপনেলে চারপাশের বাড়িরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে।” সাংসদ জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৪০ শতাংশ নিজে ঘুরে দেখেছেন। এলাকাটি ভূকম্পনপ্রবণ বলে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বাড়ির কাঠামোগুলি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত, যে-কোনও মুহূর্তে একটি মৃদু কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে।” কেন্দ্র ও এই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে তাঁর আর্জি, বাড়ি-ঘর পুনর্নিমাণের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। অনেকে ঘরে ফিরতে পারেননি এবং অদূর ভবিষ্যতে একটা ভূমিকম্প হলেই ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বেন এলাকাবাসী। সাংসদের আর্জি, পাকিস্তানি হামলায় নিহত সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত বলে চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পুঞ্চে এসে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের থেকেও ক্ষতিপূরণের আশা করছি।”
শেলিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্ত এলাকার উরি ও কারনা-ও। কারনা-য় একশোটিরও বেশি এবং উরিতে ৪৫৮টি বাড়ি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ জাভিদ আহমেদের কথায়, “সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়ির জন্য ১০ লক্ষ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়েছি।” তাংদার গ্রামের বাসিন্দা জ়াহিদ রাশিদের কথায়, শেলিং শুরু হওয়ায় আমরা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। শেলিং থামার পরে বাইরে এসে দেখি সব বাড়িঘর গুঁড়িয়ে গিয়েছে।” তাঁর মতো অসংখ্য মানুষ এখন আত্মীয় বা পড়শির বাড়ি আশ্রয় নিয়ে আছেন।
এই বিপুল ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শদাতা মাসির আসলাম ওয়ানি। তিনি জানান, দুর্গতদের আর্থিক সাহায্যের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। তাঁর কথায়, “পুর্নবাসন প্রকল্প থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)