Advertisement
E-Paper

‘ধর্ষিতা’ চিকিৎসকের আত্মহত্যা: অবশেষে গ্রেফতার সেই এসআই, নিজেকে শেষ করার আগে তাঁর নাম হাতে লিখে গিয়েছিলেন তরুণী

সাতারার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। ২৬ বছরের চিকিৎসক হাতের তালুতে লিখে যান, শেষ ৫ মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশের ওই সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) তাঁকে চার বার ধর্ষণ করেছেন!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০০:৫৭
মৃত মহিলা চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ছিল অভিযুক্ত এসআই-এর নাম। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মৃত মহিলা চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ছিল অভিযুক্ত এসআই-এর নাম। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

মহারাষ্ট্রের সাতারায় মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় মূল অভিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই)-কে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবারই গ্রেফতার হয়েছিলেন অপর অভিযুক্ত। গত বৃহস্পতিবার রাতে হোটেলের ঘরে নিজেকে শেষ করার আগে ওই দু’জনের নাম হাতের তালুতে লিখে গিয়েছিলেন সাতারার সরকারি হাসপাতালের মহিলা মেডিক্যাল অফিসার।

সাতারার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ফলটনের সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। তিনি সাতারায় একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকলেও কেন হোটেলে ছিলেন তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে ওই ভাড়া বাড়িরই মালিকের পুত্র, পেশায় ইঞ্জিনিয়র তাঁকে মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন মহিলা চিকিৎসক।

চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর হাতের তালুতে লেখা ছিল ‘আত্মহত্যার কারণ’ এবং দুই অভিযুক্তের নাম। তিনি লিখে যান, শেষ পাঁচ মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) তাঁকে চার বার ধর্ষণ করেছেন। তিনি সাতারার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়িমালিকের ইঞ্জিনিয়ারপুত্র তাঁকে মানসিক নির্যাতন করতেন। দ্বিতীয় জনকে শনিবারই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং বরখাস্ত হওয়া এসআই অধরা ছিলেন।

পরিবারের দাবি, হাসপাতালে অনৈতিক কাজ করতে জোর করা হত চিকিৎসককে। প্রভাব খাটিয়েছিলেন এক সাংসদও। হুমকি আসত সেখান থেকেও। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে শনিবার সকালে সাতারা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁর চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। জানা যাচ্ছে, তাঁর সূত্র ধরে মূল অভিযুক্ত এসআই-কে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।


পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, ফলটন গ্রামীণ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন দু’দিন ধরে পালিয়ে বেড়ানো ওই পুলিশকর্মী। উল্লেখ্য, শুক্রবার মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার এবং সুইসাইড নোট পাওয়ার অনতিবিলম্বে ওই এসআইকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু হয়। কিন্তু তার পর থেকেই ওই পুলিশ কর্মীর খোঁজ মিলছিল না।

ফলটনের উপ-জেলা হাসপাতালের ওই মেডিক্যাল অফিসার এবং ধৃত পুলিশকর্মী একই এলাকার বাসিন্দা। মহারাষ্ট্রের বীড জেলার একটি গ্রামে তাঁদের বাস। বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান ওই পুলিশকর্মীর প্রভাব রয়েছে এলাকায়। অন্য দিকে মহিলা চিকিৎসকটি কৃষক পরিবারের। দুজনেই পূর্ব পরিচিত। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে আত্মহত্যা করার কিছু ক্ষণ আগেও ওই পুলিশকর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মহিলা চিকিৎসক। ঠিক কী বার্তালাভ হয়েছিল, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে জানার চেষ্টা চলছে।

অন্য দিকে, মহিলা চিকিৎসকের গ্রামের বাড়িতে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। মৃতার পরিবার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভুয়ো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ তৈরি করে দিত হত মহিলা মেডিক্যাল অফিসারকে। পুলিশ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের জেলে ভরার জন্য ‘ফিট সার্টিফিকেট’ তৈরি করাত। তাতে সই করতে বাধ্য হতেন ওই মহিলা চিকিৎসক। এ নিয়ে পুলিশকর্তাদের লিখিত অভিযোগ করেও সাড়া পাননি তিনি। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক সুরেশ ধাস দাবি করেছেন, যে সাংসদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানো, ভয় দেখানোর মতো অভিযোগ করেছিলেন চিকিৎসক, তাঁর নামও এফআইআরে যুক্ত করুক পুলিশ।
সাতরার জেলা হাসপাতালে চাকরি করতে করতে এমডি (ডক্টর অফ মেডিসিন) পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই চিকিৎসক। বছর দুয়েক হল, সাতারায় কর্মরত ছিলেন তিনি। মেয়েকে এমবিবিএস পড়াতে প্রচুর দেনা করেছেন বাবা। এখনও প্রায় তিন লক্ষ টাকা ঋণ শোধ হয়নি তাঁদের। মৃতার কাকার কথায়, “আমার দাদা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি। কিন্তু মেয়েকে ডাক্তার বানাতে প্রচুর খেটেছে। আমি পেশায় শিক্ষক। ভাইঝিকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করানো থেকে পড়াশোনার খোঁজখবর, সবই করেছি। মেয়েটার ইচ্ছা ছিল, এমডি করবে। সে আর হল কোথায়!’’

police investigation Rape case Suicide Death Case Maharashtra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy