Advertisement
১১ মে ২০২৪
Environment

‘মন্ত্রীদের মন্তব্যে থাকে রাজনীতি, পরিবেশ নয়!’

পরিবেশবিদদের মতে, অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয় জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হয় এ রাজ্যেই।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৩৪
Share: Save:

পরিবেশ নিয়ে রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক আলোচনায় পরিবেশ এখনও জায়গা করে উঠতে পারেনি।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কলকাতা ও দিল্লির বায়ুদূষণ সূচকের তুলনামূলক মন্তব্যের পরে এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের পরিবেশবিদদের একাংশ। তাঁদের মতে, কলকাতার বাতাসের মানের ধারাবাহিক অবনমন নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু দিল্লির তুলনায় কলকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে খারাপ, এই মন্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়। এখানেই প্রশ্ন, তা হলে কি সমস্ত কিছুর মতোই নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিবেশেরও ‘রাজনীতিকরণ’ ঘটছে? সেই কারণেই কি শুধুমাত্র একটি দিনের বায়ুদূষণ সূচকের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওই মন্তব্য করলেন? কারণ, তথ্য তো সম্পূর্ণ আলাদা কথা বলছে।

সে দিন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী নিজের মন্তব্যের সমর্থনে দিল্লি ও কলকাতার বায়ুদূষণ সূচকের উল্লেখও করেছিলেন। যদিও দুই শহরের দিনভিত্তিক দূষণ বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি সমর্থন করার তথ্য পাচ্ছেন না পরিবেশবিদেরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ১ নভেম্বর থেকে জানুয়ারির ৯ তারিখ, শনিবার পর্যন্ত ৭০ দিনের দিল্লি এবং কলকাতার বায়ুদূষণ সূচকের তুলনামূল‌ক হিসেব দিচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, এই ৭০ দিনের মধ্যে দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা যেখানে ১৫ দিন ‘বিপজ্জনক’ (সিভিয়র), ২৭ দিন ‘খুব খারাপ’ (ভেরি পুয়োর), ২৩ দিন খারাপ (পুয়োর) এবং ৫ দিন মাঝারি (মডারেট) ছিল, সেখানে কলকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা ওই সময়ে এক দিনও ‘বিপজ্জনক’-এর গণ্ডি পেরোয়নি। ‘খুব খারাপ’, ‘খারাপ’ ও ‘মাঝারি মাপের দূষণ’ ছিল যথাক্রমে ১৪, ৩৮ এবং ১৫ দিন। বাতাস ‘সন্তোষজনক’ ও ‘ভাল’ ছিল যথাক্রমে ২ এবং ১ দিন।

এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘ফলে তথ্যেই পরিষ্কার, কলকাতার বাতাসের মান কখনওই ধারাবাহিক ভাবে দিল্লির তুলনায় খারাপ নয়। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী যখন দুই শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে মন্তব্য করছেন, তখন তাঁর আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত ছিল।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের আবার বক্তব্য, ‘‘কলকাতার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ঠিকই। কখনও কখনও তা দিল্লির সমান বা দিল্লির তুলনাতেও খারাপ থাকে। তা নিয়ে আলোচনা এবং লেখালেখিও হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক দিনের বায়ুদূষণ সূচকের ভিত্তিতে যে ভাবে দিল্লির তুলনায় কলকাতার বাতাসের মানকে ধারাবাহিক ভাবে খারাপ বলে দাবি করেছেন, সেটা ভুল।’’

আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, নতুন করে সংক্রমিত ৭৮৭

আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারে নাম নথিভুক্তি পৌঁছে গেল ২ কোটিতে, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথ্য ছাড়াই কোনও দাবি করলে সেখানে বলার কিছু থাকতে পারে না। শুধু এটুকুই বলব, ভুল মন্তব্য করে, ভুল তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করবেন না!’’

পরিবেশবিদদের অবশ্য বক্তব্য, অন্যান্য সব বিষয়ের মতো পরিবেশকেও রাজনৈতিক চাপান-উতোরের বৃত্তে টেনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই এক দিকে, রাজ্যের শাসকদলের উপরে রাজনৈতিক ‘চাপ’ তৈরি করতেই হয়তো দিল্লির তুলনায় কলকাতার বাতাসের মান খারাপ বলে মন্তব্য করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অন্য দিকে, সংস্কারের পরে রডন স্কোয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে শনিবার পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, ‘‘সব থেকে বড় পরিবেশপ্রেমীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবেশ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।’’ আবার এ দিনই বণিকসভা ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স’-এর এক অনুষ্ঠানে হাজির রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব দাবি করেন, দূষণ রোধে পর্ষদ কতটা সক্রিয় ভাবে কাজ করছে!

পরিবেশবিদদের মতে, অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয় জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হয় এ রাজ্যেই। পরিবেশ আদালত সরোবরে ছটপুজোর আবেদন খারিজ করলে পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েই সেখানে পুজোর অনুমতি পাওয়ার জন্য রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত আবেদন করে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘আর এ সবের জাঁতাকলে পড়ে যা হারাতে থাকে, তা হল পরিবেশের মানোন্নয়নের উদ্যোগ। ক্রমশ মুখ্য হয়ে উঠতে থাকে অভিযোগ আর প্রতি অভিযোগের মতো তুচ্ছ বিষয়গুলি! তাই মন্ত্রীদের মন্তব্যে থাকে রাজনীতি, পরিবেশ নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Politics Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE