দামি ওষুধ তো বটেই, এমনকি নিত্যদিনের ওষুধে লাগামছাড়া মুনাফা রাখছে বিভিন্ন নামীদামি ওষুধ সংস্থাগুলি। ওষুধে ৫০০-১৮০০ শতাংশ লাভ রাখা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে। যাতে কমিটির ওষুধের বাড়তি দাম সংক্রান্ত প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে ন্যাশনাল ফার্মাসিটিউক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ)।
আজ সার ও রসায়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে লোকসভায় ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়। যাতে ওষুধের দামের বাড়তে থাকাই কেবল নয়, যে ভাবে ওষুধ সংস্থাগুলি কার্যত মুনাফার লোভে আমজনতাকে লুট করে চলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিটির বৈঠকে একাধিক ওষুধ সংস্থার মূল্য তালিকা জমা পড়েছিল। যাতে দেখা যাচ্ছে ওই সব ওষুধ সংস্থাগুলি কোনও কোনও ওষুধে ৫০০-১৮০০ শতাংশ অত্যাধিক ও অযৌক্তিক মুনাফা রেখে নিজেদের ওষুধ বিক্রি করছে। নামী সংস্থা হওয়ায় মানুষ তাদের ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
তাই কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রকের কর্তাদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে প্রধানমন্ত্রী জনৌষধি যোজনায় যদি সস্তায় ওই একই ওষুধ দেওয়া যায়, তা হলে ওই ওষুধ সংস্থাগুলি কেন তা করছে না। জবাবে মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, জনৌষধির ক্ষেত্রে পুরো দেশের জন্য ওষুধ সংগ্রহ হয়ে থাকে। যে সংখ্যক ওষুধ সংগ্রহ হয় তার পরিমাণ বিপুল। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। উপরন্তু ওষুধ বিলি করার ক্ষেত্রে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার হওয়ায় খরচ নামমাত্র। উল্টো দিকে ওষুধ সংস্থাকে গোটাটাই করতে অর্থের বিনিময়ে। উপরন্তু উৎপাদনের সঙ্গে গবেষণা সংক্রান্ত খরচও আছে। ফলে কোনও ভাবেই বেসরকারি ওষুধ সংস্থাগুলির পক্ষে জনৌষধির মতো কম দামে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না।
কোনও ওষুধের স্টকিস্ট বা মজুতদারের কাছে দাম এবং সেই ওষুধের সর্বাধিক খুচরো মূল্যের পার্থক্য কত সে বিষয়ে মন্ত্রকের কাছে কোনও তথ্য নেই। দু’টি ক্ষেত্রে বিপুল দামের পার্থক্য কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য অবলিম্বে একটি গবেষণার সুপারিশ করেছে কমিটি। এ ছাড়া কমিটি দেখেছে বেয়ার মেটাল স্টেন্টস (বিএমএস) ও ড্রাগ এলিউটিং স্টেন্টস (ডিইএস)-এর ক্ষেত্রে গত বছরের এপ্রিলে সর্বাধিক দাম ধার্য করা হয়েছিল যথাক্রমে ১০,৫০৯ টাকা ও ৩৯,২৬৭ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের স্টেন্টের দাম হিসেবে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে। মূল দামের সঙ্গে হাসপাতালের খরচ জুড়ে কয়েক লক্ষ টাকার বিল মেটাতে হয় রোগীকে। কমিটি তাই স্টেন্ট বসানোর খরচ যাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে থাকে তা নিশ্চিত করতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে এনপিপিএ-কে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)