ভোট চুরিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই নির্বাচন কমিশন দেশ জুড়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে হাত দিয়েছে বলে মধ্যপ্রদেশের পঞ্চমঢ়ীতে সরব হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিহারে ভোট প্রচারের শেষ দিনের সকালে পঞ্চমঢ়ীর জঙ্গল সাফারি করতে দেখা যায় রাহুলকে। বিজেপির কটাক্ষ, বিহারে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই জঙ্গলে হাওয়া খেতে গিয়েছিলেন রাহুল।
গত কাল দলীয় কর্মী সভা উপলক্ষে মধ্যপ্রদেশের নর্মদাপুরম জেলার পঞ্চমঢ়ী যান রাহুল। সেখানেই আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভোট চুরির বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হন তিনি। বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে দেখিয়েছি কী ভাবে হরিয়ানায় ভোট চুরি করা হয়েছে।প্রতি আট জন ভোটারে একটি করে ভোট চুরি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ ভোট চুরি হয়েছে ওই রাজ্যে।’’ রাহুলের দাবি, হরিয়ানার পরিসংখ্যান দেখার পরে তিনি বিশ্বাস করেন, কেবল হরিয়ানা নয়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ়ের নির্বাচনেও ভোট চুরি হয়েছে।এর পিছনে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের আঁতাঁত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিহারের পরে চলতি মাস থেকে দেশ জুড়ে ১২টি রাজ্যে এসআইআরের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ এ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘‘ভোট চুরি যাতে সামনে না আসে এবং তাকে যাতে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়া সম্ভব হয়, সে কারণেই দেশ জুড়ে এসআইআর করা হচ্ছে।’’ পাল্টা বিজেপির দাবি, অতীতেও একাধিক বার এসআইআর করা হয়েছে। অধিকাংশই হয়েছে কংগ্রেস শাসনে। রাহুলের যুক্তি মেনে নিলে সেই সময়ের কংগ্রেসসরকারও ভোট চুরিকে ঢাকতে এসআইআর করেছিল!
‘ভোট চুরি’র পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার— এই ত্রিশক্তির আঁতাঁত রয়েছে বলে অভিযোগে সরব রাহুল। তিনিবলেন, ‘‘যৌথ অংশীদারিতেনরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও জ্ঞানেশ কুমার ওই ভোট চুরির কাজ করে চলেছেন। দেশকে এর পরিণাম ভুগতে হচ্ছে। গণতন্ত্র ও অম্বেডকরের সংবিধান আক্রমণের মুখে পড়ছে।’’ ইতিমধ্যেই কর্নাটক ও হরিয়ানার ভোট চুরির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাহুল। ভোট চুরির প্রমাণ হিসাবে তাঁর কাছেআরও অনেক তথ্য রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
রাহুল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সামান্য তথ্যই সামনে আনা হয়েছে। ভোট চুরি কী ভাবে করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। যথাসময়ে তা সামনে আনা হবে।’’ রাহুলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শাহজ়াদ পুনাওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘আসলে ভোট চুরি নিয়ে ভুয়ো অভিযোগ তুলে নিজের হারের দায়কে নির্বাচন কমিশনের উপর ঠেলে দিতে চাইছেন রাহুল। যে রাজ্যে রাহুলের দল জেতেন, সেখানে ভোট চুরির অভিযোগ ওঠে না।’’
আজ ছিল বিহারের প্রচারের শেষ দিন। আজ ভোরবেলায় রাহুল পঞ্চমঢ়ীর জঙ্গল সাফারি করতে চলে যান। জঙ্গলের ভিতরে প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে দেখেন তিনি। তাই নিয়েও তাঁকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, বিহারের হার নিশ্চিত জেনেই গা ছেড়ে দিয়েছেন রাহুল। সেই কারণেই জঙ্গলে হাওয়া খেতে গিয়েছিলেন।
বিজেপি মুখপাত্র শাহজ়াদ পুনাওয়ালা রাহুলের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘রাহুল বিরোধী দলনেতা নন। উনি আসলে পর্যটন ও পার্টি করার নেতা।’’ বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রা করার পর প্রায় দু’মাস ভোটমুখী ওই রাজ্যে দেখা যায়নি রাহুলকে। আজ অবশ্য জঙ্গল সাফারি সেরে বিহারের দু’টি জায়গায় রাজনৈতিক সভাকরেন রাহুল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)