E-Paper

হনুমানের মুখোশে রাহুল, হাতে তুলে নিলেন গদাও! অসমে ন্যায় যাত্রার দ্বিতীয় দিনে আর কী কী হল?

কংগ্রেস নেতাকে ছুঁয়ে দেখা, তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক যেমন পড়ল, তেমনই কোনও শীতপোশাক ছাড়া এই ঠান্ডা তিনি সহ্য করছেন কী ভাবে, সেটা হয়ে দাঁড়াল চর্চার মূল বিষয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৭
Rahul Gandhi

হনুমান মুখোশ পরে রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

সকালের কনকনে শীতে রাহুল গান্ধী যখন ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে অসমের মাজুলিতে নামলেন, তখন তাঁর পরনে সেই চেনা সাদা টি-শার্ট। কংগ্রেস নেতাকে ছুঁয়ে দেখা, তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক যেমন পড়ল, তেমনই কোনও শীতপোশাক ছাড়া এই ঠান্ডা তিনি সহ্য করছেন কী ভাবে, সেটা হয়ে দাঁড়াল চর্চার মূল বিষয়। একই সঙ্গে চর্চায় উঠে এল মুখোশ পরে রাহুলের হনুমান সাজাও।

নিমাতিঘাট থেকে নৌকায় মাজুলি, আউনিআটি সত্রে পুজো দেওয়া, সেখান থেকে গড়মুড় হয়ে রাজীব গান্ধী স্পোর্টস কমপ্লেক্স দেখা, ঢকুয়াখানায় বাসযাত্রা, গোগামুখে ভাষণ ও রেল ময়দানে রাত্রিবাস— চুম্বকে এই হল রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার অসম পর্বের দ্বিতীয় দিন। আউনিআটি সত্রে ছোট্ট দেবাশিস চুতীয়ার দুর্দান্ত ভাওনা-নৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কোলে বসিয়ে ফুলাম গামোসা পরিয়ে দেন রাহুল। পরে তিনি নিজেও হনুমানের মুখোশ পরে, হাতে গদা ঘুরিয়ে ছবি তোলেন। বাসযাত্রার ফাঁকে গ্রামে সকলের সঙ্গে বসে চা খান। চলে আলাপচারিতা।

এ দিন মাজুলিতে রাহুলের যাওয়ার জন্য গাড়ি সমেত নদী পার হওয়ার (রো-রো) ভেসেল বা দুই ইঞ্জিনের নৌকার ব্যবস্থা করা যাবে না বলে জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তাই ছোট নৌকাতে, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই, প্রায় গলুইয়ের উপরে দাঁড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র পেরোন রাহুল। রাজ্যে এর আগেকার নৌকাডুবির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ভাবে নৌকাযাত্রা বেআইনি। তাই রাহুলের বিরুদ্ধে প্রশাসন এফআইআর করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। গত কাল যোরহাটে রাহুলের পদযাত্রা হঠাৎ করে অনির্ধারিত পথে বেঁকে যাওয়ায় হুড়োহুড়িতে কয়েক জন পদপিষ্ট হয়েছেন বলে যোরহাট প্রশাসনও এফআইআর করেছে।

এরই মধ্যে হয় জনসভা। সেখানে রাহুল বলেন, “হিমন্তবিশ্ব শর্মা দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী।’’ বিজেপি-আরএসএসের সঙ্গে রাজনীতির নয়, আদর্শের লড়াই চলছে বলে জানিয়ে জনসভায় থাকা আদিবাসীদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, “আদিবাসী মানে হল, যাঁরা এই ভূমির আদি বা প্রকৃত বাসিন্দা। এখানকার মাটি, জল, জঙ্গলে তাঁদেরই প্রথম অধিকার থাকার কথা। কিন্তু বিজেপি তাঁদের শুধুই বনবাসী করে রেখেছে। চাইছে, তাঁরা যেন উন্নয়নের আলোয় নয়, জঙ্গলের অন্ধকারে, অশিক্ষায় জীবন কাটিয়ে দেন।”

পরিবেশপ্রেমী, বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে দেখা করে রাহুল এ দিন অসমের সমাজ ও পরিবেশের বিভিন্ন খবর নেন। ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। মিসিং জনজাতির প্রতিনিধিরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রাহুলের সামনে। চুপ নেই হিমন্তও। রাহুলকে পরিচয় ও পদবি নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বিজেপির মাজুলির বিধায়ক ভুবন গাম দাবি করেন, রাহুলের সভায় মাত্র ৫০ জন স্থানীয় মানুষ ছিলেন। বাকিদের বাইরে থেকে আনা হয়েছে। বিজেপির আর এক বিধায়ক সুমন হরিপ্রিয়া বলেন, “রাহুল গান্ধী কোন গ্রহের প্রাণী জানি না। মাঝেমধ্যে এমন ভিন্‌ গ্রহের প্রাণী আসে। আবার ফিরেও যাবে নিজের জগতে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাহুলের অসম সফরের সময়ই নগাঁও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ কলিতা-সহ শতাধিক কংগ্রেস কর্মী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

পাল্টা জবাবে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘রাহুলের ন্যায় যাত্রার জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পেয়ে উল্টোপাল্টা বলছেন হিমন্ত।’’ কংগ্রেসের বহিষ্কৃত নেত্রী অঙ্কিতা দত্তের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে রাহুলের সমালোচনা করেছিলেন হিমন্ত। রমেশ বলেন, ‘‘আমি অঙ্কিতা ও জাতীয় যুব কংগ্রেস সভাপতি শ্রীনিবাসের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ‘অসমের নারদমুনি তথা উত্তর-পূর্বের বিজেপি ভাইসরয়’ হিমন্ত তা হতে দেননি। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে।’’ রমেশের চ্যালেঞ্জ, হিমন্ত রাহুল ও কংগ্রেসকে যা ইচ্ছে অপমান করতে পারেন, তাতে তাঁর ভয়ের বহিঃপ্রকাশই প্রকট হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rahul Gandhi Bharat Jodo Nyay Yatra Congress Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy