রাজ্যসভায় রাজনাথ। পিটিআই
লাদাখ সীমান্তে এপ্রিল বা তার আগের স্থিতাবস্থা ফিরে আসবে কি না, তার কোনও জবাব দিতে পারলেন না প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের পক্ষে একাধিক সাংসদ ওই প্রশ্ন করলেও এর কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি রাজনাথ। সংসদের দুই কক্ষে রাজনাথ উপুর্যপরি বেজিংকে প্রবল আক্রমণ করে ঘরোয়া রাজনীতিতে কিছুটা জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলার চেষ্টাও করলেন বটে। কিন্তু চিন প্রশ্নে দিনের শেষে নরেন্দ্র মোদী সরকারের হাতে রইল পেনসিল, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
লাদাখ প্রশ্নে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সামনে এগিয়ে সেনা-জাতীয়তাবাদের একটি হাওয়া সুকৌশলে তৈরি করতে চেয়েছে কেন্দ্র। এটা ঘটনা যে কোনও রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের প্রশ্নে বিদেশ মন্ত্রক যতটা স্বর চড়াতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পারে তার দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা এ-ও বলছেন, অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে যে ভাবে তোপ দাগতেন, বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তা করতে পারতেন না। এ ক্ষেত্রেও আজ রাজনাথ সিংহ অতীতের সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করার জন্য বেজিংকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কিন্তু এত তোপ দাগলেও, আসল উত্তর যে তাঁর কাছে নেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির প্রশ্নেই। গত মঙ্গলবার লোকসভায় যে লিখিত বিবৃতি রাজনাথ পাঠ করেছিলেন আজ সেটিই রাজ্যসভায় পড়ে শোনান তিনি। পরে ব্যাখ্যায় কংগ্রেস সাংসদ অ্যান্টনি জানতে চান, সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত। এর অর্থ কী তা স্পষ্ট করার দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে অ্যান্টনি জানতে চান এপ্রিলে লাদাখের যে পরিস্থিতি ছিল সেই স্থিতাবস্থা কি আদৌ ফিরে আসবে? অ্যান্টনির আগে তাঁরই দলের সাংসদ আনন্দ শর্মা ওই একই প্রশ্ন রাখেন রাজনাথের কাছে। কিন্তু জবাবে এ নিয়ে একটি শব্দ খরচ করেননি রাজনাথ।
চিনের সঙ্গে মস্কোর বৈঠকে পাঁচ দফা ঐক্য-রফা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লাদাখে বরফ পড়ার আগেই যে জট কাটবে না তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মোদী সরকারের কাছে। সূত্রের মতে, গত মে মাসে চিন সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কিছু অংশ অতিক্রম করে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। ভারতের আবেদন সত্ত্বেও তারা ফিরে যায়নি। ফলে পূর্বাবস্থা ফেরা কঠিন। উল্টে ভারতীয় ডেপস্যাং, উত্তর গালওয়ান, গোগরা ও প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে ভারতীয় সেনাকে টহল দিতে বাধা দিচ্ছে চিন সেনা। উত্তরের ধাঁচেই গত ২৯ অগস্ট রাতে দক্ষিণ প্যাংগং লেক সংলগ্ন কৌশলগত অবস্থানগুলি দখলের ছক করে হামলা চালায় চিন সেনা। রাজনাথের কথায়, ‘‘সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলাকালীন ২৯-৩০ অগস্টের রাতে ওই হামলা চালানো হয়। এদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনও মিল নেই।’’ রাজনাথের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরেই বিজেডি সাংসদ প্রসন্ন আচারিয়া সরকারের কাছে জানতে চান, ‘‘ভারত কি এখনও চিনকে বিশ্বাস করছে? চিন বরাবরই চুক্তি ভেঙে এসেছে। তাই চিনের সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতা করার আগে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘চিনের উচিত ভারতের সঙ্গে ঐকান্তিক ভাবে কাজ করে প্যাংগং লেকের সংঘর্ষ বিন্দু থেকে সেনা প্রত্যাহার করা। আমরা আশা করব চিন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে মান্যতা দেবে।’’
আরও পড়ুন: কৃষি-সংস্কারে আপত্তি, পদত্যাগ হরসিমরতের
তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি আজ লাদাখ প্রশ্নে সরকারের পাশে দাঁড়ালেও, গালওয়ানে ভারতীয় সেনারা টহল দিতে পারছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। অতীতে গালওয়ান উপত্যকার পাঁচ থেকে আট ফিঙ্গার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে চিন। অন্য দিকে ভারতের দাবি ছিল ফিঙ্গার আট পর্যন্ত এলাকা ভারতের সীমানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সীমানা ঘিরে অতীতে বিতর্ক থাকলেও, এপ্রিলের আগে পর্যন্ত আট নম্বর ফিঙ্গার পর্যন্ত টহলদারি করে এসেছে ভারতীয় সেনা। সূত্রের মতে, মে মাস থেকে ওই বিস্তীর্ণ এলাকা এ যাত্রায় পাকাপাকি ভাবে নিজেদের দখলে নিয়ে এসে ভারতীয় সেনার টহল বন্ধ করে দিয়েছে চিন। আজ নিজের দ্বিতীয় প্রশ্নে কংগ্রেস সাংসদ অ্যান্টনি জানতে চান, অতীতে গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে কোনও বিতর্ক ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সংঘাতের পরে কি ভারতীয় সেনা গালওয়ানে আট নম্বর ফিঙ্গার পর্যন্ত টহল দিতে পারছে না?’’ জবাবে রাজনাথ বলেন, ‘‘এ নিয়েই তো চিনের সঙ্গে লড়াই চলছে। লড়াই শুরু হওয়া আমাদের হাতে থাকলেও, তা শেষ হওয়া আমাদের হাতে নেই।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ওই এলাকায় কী ভাবে টহলদারি চলবে তা আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া আছে। পৃথিবীর কোনও শক্তি ভারতীয় সেনাকে টহলদারি দেওয়া থেকে আটকাতে পারবে না। আমাদের সেনারা তো এ জন্যই প্রাণ দিয়েছেন।’’
বিরোধীরা তাতে বিশেষ সন্তুষ্ট না হওয়ায় ব্যাখ্যায় রাজনাথ বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় সেনার গতিবিধি নিয়ে বেশি প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। আশা করি সাংসদেরা বিষয়টি বুঝতে পারছেন।’’ সরকারের অস্বস্তি দূর করতে এরপর আসরে নামেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বিরোধী দলের কিছু নেতাকে লাদাখের প্রকৃত পরিস্থিতি জানাতে রাজনাথকে একটি ঘরোয়া ভাবে বৈঠক করার পরামর্শ দেন বেঙ্কাইয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy