গত পৌনে দু’বছরে ভারতে বিলিয়ন ডলারের মালিকের সংখ্যা (অন্তত ৭৪০০ কোটি টাকার সম্পদ যাঁদের) ৩৯% বেড়ে হয়েছে ১৪২। যাঁদের মিলিত সম্পদের অঙ্ক ৫৩ লক্ষ কোটি টাকা। ধনকুবেরদের সম্পদ এতটাই বেড়েছে যে, প্রথম ১০ জনের মোট বিত্তকে কাজে লাগাতে পারলে আগামী ২৫ বছর দেশের স্কুল শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার খরচ উঠে আসবে। এঁরা যদি দিনে ১০ লক্ষ ডলার (৭.৪ কোটি টাকা) করে খরচ করেন, তা হলেও বর্তমান সম্পত্তি ফুরোতে সময় লাগবে ৮৪ বছর। আর এর ঠিক উল্টো ছবি নিচু তলার মানুষের ক্ষেত্রে। যেখানে দেশের ধনীতম ১০ শতাংশের হাতে জাতীয় সম্পদের ৪৫% রয়েছে, সেখানেই জনসংখ্যার নীচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৬%। আবার ধনীতম ৯৮ জনের হাতে রয়েছে নিম্নতম ৫৫.৫ কোটি মানুষের সমান টাকা। করোনাকালে বেড়ে ওঠা সম্পদের এমন বৈপরিত্যের কথাই বলা হয়েছে অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষায়। যে লক্ষণসম্পর্কে ঠিক এক দিন আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু।
করোনার উপর্যুপরি আক্রমণে হয়েছে অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষায়। যে লক্ষণ সম্পর্কে ঠিক এক দিন আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। করোনার উপর্যুপরি আক্রমণে সাধারণ মানুষের প্রাণসংশয় যেমন বেড়েছে, তেমনই কল-কারখানা ও ছোট-মাঝারি সংস্থা বন্ধ হয়ে নড়ে গিয়েছে কাজের বাজারের ভিত। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন হয়েছে দুঃসহ। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই আজ অনলাইনে শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের দাভোস অ্যাজেন্ডা সামিট। সেখানে অক্সফ্যামের পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কী ভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে ধনকুবেরদের সম্পদ।
এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন কৌশিকবাবুর উদ্বেগের কথা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ জানিয়েছিলেন, সার্বিক ভাবে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও তার সুফল আটকে রয়েছে সমাজের উঁচু তলায়। আর দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ মন্দার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। আজ অক্সফ্যামের রিপোর্ট নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘নিজের বন্ধুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী টাকার পাহাড় বানিয়ে চলেছেন, আর আমজনতাকে কর ও বেকারত্বের বোঝায় জর্জরিত করছেন। এই পরিসংখ্যান নিয়ে কি ডব্লিউইএফের মঞ্চে চর্চা হবে?’’ আর ডব্লিউইএফের সম্মেলনে নিজের বক্তৃতা শুরুর আগে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র ৮০ কোটি মানুষের নিখরচার রেশনের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিষেধক প্রয়োগ ১০০ কোটি পার করেছে। সেই সঙ্গে একগুচ্ছ আর্থিক সংস্কারের পদক্ষেপ করা হয়েছে যা অর্থনীতিবিদদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।