শিক্ষার অধিকার আইন বলছে, শুধু সরকারি স্কুল নয়, বেসরকারি স্কুলেও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বিনামূল্যে পঠনপাঠনের সুযোগ পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু সিংহভাগ বেসরকারি স্কুলই সেই সুযোগ দিতে নারাজ বলে অভিযোগ। এই আবহে দরিদ্র দুই ভাইয়ের তরফে দায়ের করা এমনই এক মামলায় সারা দেশের নিরিখে দৃষ্টান্তমূলক রায় দিল গৌহাটি হাই কোর্ট। গুয়াহাটির একটি বেসরকারি স্কুলকে ঈশান ও রেহান বরাই নামে ওই দুই শিশুর বিনামূল্যে ভর্তির পাশাপাশি বই ও ইউনিফর্মের খরচও বহন করারও নির্দেশ দেওয়া হল। বিচারপতি কৌশিক গোস্বামী জানান, বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকারের আওতায় রয়েছে পাঠ্যপুস্তক ও স্কুলের পোশাক সরবরাহের বিষয়টিও।
আবেদনকারী শিশুদের আইনজীবী মহাঋষি শর্মা জানান, অনেক চাপানউতোরের পরে রেহাবাড়ি এলাকার ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি শিশুদের ভর্তি ফি মকুব করেছিল, তবে বই ও ইউনিফর্মের খরচ অভিভাবকদের বহন করতে বলা হয়েছিল। দরিদ্র বাবা-মা সেই খরচ বহনে অক্ষম হওয়ায় দুই ভাই গত এপ্রিল মাস থেকে ক্লাস করতে পারেনি। আদালত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য শিক্ষা দফতরকে বলেছে, “যদি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে, তবে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক, স্কুলের পোশাক ইত্যাদি বাবদ হওয়া খরচ রাজ্য সরকার স্কুলকে ফেরত দেবে।” বিচারপতি আরও জানান, যেহেতু আবেদনকারীদের শিক্ষাবর্ষের ৫ মাস নষ্ট হয়েছে, সেই ক্ষতি পূরণ করার জন্য পদ্ধতিগত ভাবে অতিরিক্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থাও স্কুলকে করতে হবে।”
উল্লেখ্য, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি বেসরকারি স্কুল অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ন্যূনতম ২৫% আসন বিনামূল্যে সংরক্ষণ করতে বাধ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও টিউশন ফি নিখরচায় শিক্ষার আওতায় রয়েছে, কিন্তু বই, স্কুলের পোশাক, পরিবহণ ও অতিরিক্ত পাঠক্রম সংক্রান্ত খরচ বিনামূল্যে শিক্ষার আওতায় পড়ে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা দফতর অস্পষ্ট নিয়মাবলি ও নির্দেশিকা জারি করেছে। এতে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, যার জেরে প্রায়ই দরিদ্র শিশুরা বেসরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় না। এই রায় সেই অস্পষ্টতাই অনেকাংশে দূর করল বলে মনে করা হচ্ছে। ভবন’স গঙ্গাবক্স কানোরিয়া বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক অরুণ দাশগুপ্ত এই নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকারের আওতায় এটি অনেক দিন ধরেই প্রযোজ্য আছে। স্থানীয় ভাবে পিছিয়ে পড়া কোনও শিশু ভর্তি হতে এলে আমরা নিতে বাধ্য। রাজ্য সরকারেরও এ ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)