পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিন পরে ক্রেমলিন থেকে ফোন এল ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন বলে সোমবার দাবি করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সোমবারই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পহেলগাঁও সন্ত্রাসের নিন্দা জানালেও সরাসরি দোষারোপ করেননি পাকিস্তানকে! তিনি বলেছেন, ‘‘নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ককে অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করে রাশিয়া।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গত সপ্তাহে সন্ত্রাসবাদীরা ২৬ জনকে খুন করার পরে কাশ্মীর সীমান্তে তৈরি হওয়া উত্তেজনা নিয়ে রাশিয়া গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।’’
আরও পড়ুন:
রণধীর জানিয়েছেন, পহেলগাঁও নাশকতার অপরাধী এবং তাদের মদতদাতাদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে মোদীকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন পুতিন। দুই রাষ্ট্রনেতা ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারি এবং পারস্পরিক বিশেষ এবং সুবিধাদানের প্রক্রিয়া আরও গভীর করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিজয় দিবসের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপন কর্মসূচি উপলক্ষে পুতিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিপাক্ষিক বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ক্রেমলিন সোমবার জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন পুতিন।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে, ১৯৪৫ সালের ৯ মে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল জার্মানির নাৎসি বাহিনী। সেই ঘটনাকে স্মরণ করতে প্রতি বছরই ৯ মে দিনটি রাশিয়ায় ‘বিজয় দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। পুতিনের তরফে বিজয় দিবসের ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি’ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও মোদী এ বার মস্কোয় সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেননি।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও নাশকতার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা কড়া নিন্দা করে বিবৃতি দিলেও সরাসরি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকারকে দায়ী করেননি। গত সপ্তাহে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স (ঘটনাচক্রে, পহেলগাঁও কাণ্ডের সময় যিনি ভারতেই ছিলেন) বলেন, ‘‘আমাদের আশা, ভারত এই সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব এমন ভাবে দেবে, যাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি না হয়।’’ ইতিহাস বলছে, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছিল মস্কো। কিন্তু সোভিয়েত যুগের সেই নীতি বদলে এ বার ভারসাম্যের পথে হাঁটার বার্তা দিলেন পুতিন।