Advertisement
০২ মে ২০২৪
No-Confidence Motion

অধীরকে ঘুঁটি বানিয়ে মোদী আক্রমণ করলেন বিরোধী জোটকে, উস্কে দিলেন দিদির সঙ্গে দ্বন্দ্ব

মোদীর ইঙ্গিত, তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পেয়েই প্রথমে অধীর চৌধুরীর নাম অনাস্থা বিতর্কের বক্তাদের তালিকায় রাখেনি কংগ্রেস।

(বাঁ দিক থেকে) অধীর চৌধুরী, নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(বাঁ দিক থেকে) অধীর চৌধুরী, নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ১৮:৪৯
Share: Save:

বুধবার খোঁচা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার একই প্রসঙ্গ তুলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কের জবাবি ভাষণ দিতে উঠে মোদী শুরুই করেন অধীরকে দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে ‘অধীরবাবু’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘এই অনাস্থা-বিতর্কে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, যা আগে কখনও দেখিনি, শুনিনি এমনকি, কল্পনাও করিনি! বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতার (অধীর) নাম প্রথমে বক্তাদের তালিকাতেও ছিল না!’’ তার পরেই কংগ্রেস সাংসদদের লক্ষ্য করে মোদী বলেন, ‘‘আপনাদের দুর্বলতা কোথায়? কেন অধীরবাবুকে কোণঠাসা করছেন? জানি না, কলকাতা থেকে কোনও ফোন এসেছে কি না!’’ অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে অধীরের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের এবং সুবিদিত, তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বকে অধীরকে বক্তা তালিকায় না-রাখার কথা বলেছেন কি না।

সেই সময় অধীর-সহ কংগ্রেস সাংসদেরা সমস্বরে মোদীর কথার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। কিন্তু তাতে না থেমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু এ বার নয়। বার বার অধীরবাবুকে অপমান করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব! কখনও নির্বাচনের অছিলায় তাঁকে পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।’’

এর পরেই মোদী ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে কংগ্রেস সাংসদ রভনীত সিংহ বিট্টুর নামটি উচ্চারণ করে মৃদু হাসেন। আর বলেন, ‘‘আমি অধীরবাবুর প্রতি পূর্ণ সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকে দু’মাসের জন্য লোকসভার দলনেতার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে পঞ্জাবের সাংসদ বিট্টুকে সেই পদে বসানো হয়েছিল। অনেকে বলেছিলেন, মমতাকে ‘স্বস্তি’ দিতেই অধীরকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছিল।

মোদী আরও দাবি করেন, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে যখন অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তৎকালীন বিরোধী দলনেতা শরদ পওয়ারকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা বিতর্কে বিরোধীদের তরফে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সনিয়া গান্ধী। সেই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা খড়্গেজি (মল্লিকার্জুন খড়্গে)। কিন্তু এ বার দেখুন অধীরবাবুর কী হাল হয়েছে! ওঁর দলই ওঁকে বলার সুযোগ দিচ্ছিল না। কিন্তু গত কাল (বুধবার) অমিত-ভাই (অমিত শাহ) বললেন, তাঁর বিষয়টি ভাল লাগেনি।’’ বস্তুত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ স্পিকারকে খানিক কপট আক্ষেপের সুরেই বলেছিলেন, অধীরকে তাঁর জন্য নির্ধারিত সময় থেকে যেন সময় দেওয়া হয় বক্তৃতা করার জন্য। কারণ, কংগ্রেস অধীরের নাম বক্তার তালিকায় রাখেনি। সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার মোদীর দাবি, কংগ্রেসের জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও স্পিকার ওম বিড়লার উদারতার কারণে বলার সময় পেয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা।

মোদী যা বলেছেন, তা অধীরের ‘বিড়ম্বনা’ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। তৃণমূল নেত্রী মমতার সঙ্গে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের সম্পর্ক গত তিন দশক ধরেই ‘মধুর’। সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে দিয়েই লোকসভা ভোটের আগে ‘ইন্ডিয়া’য় ফাটল ধরাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অধীর-প্রসঙ্গ তুলে অস্বস্তিতে ফেলতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বকেও। অধীরকে ‘ঘুঁটি’ বানিয়ে বিরোধী জোটকে আক্রমণ করেছেন মোদী। কখনও নাম না-করে মমতার প্রসঙ্গ তুলেছেন আবার কখনও ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অধীরের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘মনে করে দেখুন, এই বামপন্থীরা আপনাকে সেই ভোটে হারিয়ে দিয়েছিল। এখন তাঁদের সঙ্গে আপনাকে জোট করতে হচ্ছে! অতীতের কথা এত সহজে ভুলে গেলেন?’’

অনাস্থা-বিতর্কে অবশ্য বুধবার থেকেই বিজেপি নিশানা করেছে অধীরকে। শাহের বক্তৃতার মধ্যে একটি মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা। দ্রুত তার জবাবে খোঁচা দিয়ে শাহ বলেন, ‘‘আপনাকে আমি আমার বলার সময় থেকে ৩০ মিনিট দেব। যাতে আপনি বলতে পারেন। কিন্তু আপাতত বসে যান!’’ এর পরেই অধীরকে নিশানা করে শাহের মন্তব্য, ‘‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার দল আপনাকে বলতে দেয়নি বলেই আপনি এ ভাবে কথার মাঝে কথা বলছেন।’’

এর পরেই বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, দলের শেষ বক্তা হিসাবে অনাস্থা-বিতর্কে অংশ নেবেন অধীর। প্রথমে বক্তাদের তালিকায় তাঁর নাম না থাকলেও বিতর্ক শুরুর ঠিক আগে কংগ্রেসের তরফে ‘শেষ বক্তা’ হিসাবে তাঁর নাম জমা পড়ে লোকসভার স্পিকারের কাছে। তবে বক্তৃতা করলেও ‘বিড়ম্বনা’ থেকে রেহাই পেলেন না অধীর। এক দিকে মূলত তাঁকে সামনে রেখেই বিরোধী জোটের মধ্যে ‘ফাটল’ ধরানোর চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। অন্য দিকে, অধীরকে তাঁর দল কংগ্রেস থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করারও চেষ্টা করলেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন, সাধারণ ভাবে অধীরের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক ভাল। কিন্তু সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের সাংসদ অধীরের পক্ষে তা রাজনৈতিক দিক দিয়ে ‘সুবিধাজনক’ নয়। ফলে মোদী-শাহ যে ভাবে অধীরের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘দূরত্ব’ রচনার চেষ্টা করেছেন, সেটিও প্রদেশ সভাপতির পক্ষে ‘বিড়ম্বনাজনক’ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE