বিরোধীদের নিশানায় থাকা প্রাধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি— দু’জনের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় রাজনৈতিক মহলে। মোদীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে মঞ্চভাগ বা আদানির প্রশংসা, দুই-ই করে থাকেন তিনি। আবার একই সঙ্গে বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের গুণগান গেয়ে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের দুরবস্থার জন্য মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে নিশানা করতেও ছাড়েন না তিনি।
তিনি শরদ পওয়ার, মরাঠা রাজনীতির ‘স্ট্রংম্যান’ হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’য় নানা কারণে তাঁর কর্তৃত্ব হারিয়ে পওয়ার এখন নিজের রাজনৈতিক পরিচয়কে ধরে রাখার জন্য সক্রিয় হয়েছেন। তা করতে গিয়ে মোদীর সঙ্গে হিটলারের তুলনা টানলেন তিনি। পওয়ারের অভিযোগ, জার্মানিতে হিটলার যে ভাবে মিথ্যা ও আগ্রাসী প্রচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন, সেই একই কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মিথ্যে ও আগ্রাসী প্রচার করছে বিজেপি।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় এনসিপি-র এক সম্মেলনে পওয়ার বলেন, ‘‘বিজেপি এখন ক্ষমতায়। তারা একটা আগ্রাসী প্রচার ব্যবস্থা তৈরি করেছে। জার্মানিতে হিটলারের প্রচার ব্যবস্থার সঙ্গে যার তুলনা চলতে পারে। হতে পারে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪০০টিরও বেশি আসনকে নিশানা করে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু দেশের আসল পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নেই। কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, দিল্লি, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে তারা ক্ষমতায় নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মোদী ভারতবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করবেন দেশকে। কিন্তু তার পঞ্চাশ শতাংশও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী খালি গ্যারান্টি দেন। কিন্তু তা পূরণ হয় না।’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কথার প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেন, ‘‘গত ১৩ ডিসেম্বর লোকসভার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পিছনে রয়েছে যুব সমাজের হতাশা
এবং বেকারত্ব।’’
মোদীকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইডি-র তল্লাশির মুখে পড়েছেন পওয়ারের নাতি তথা আহমেদনগরের কারজাদ-জমখেড় কেন্দ্রের বিধায়ক রোহিত পওয়ার। একটি টাকা নয়ছয়ের মামলায় শুক্রবার পওয়ারের খাসতালুক বারামতী-সহ একাধিক জায়গায় টানা তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। এনসিপি নেতৃত্বের অভিযোগ, মোদীর সমালোচনা করা হয়েছে বলেই পওয়ারের পরিবারকে হেনস্থা করতে ইডি-কে আসরে নামানো হয়েছে। মোদীর আমলে ইডি শুধু মাত্র বিরোধীদের হেনস্থা করার একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়ে লড়ছে ইন্ডিয়া মঞ্চের তিন শরিক এনসিপি, শিবসেনা এবং কংগ্রেস। গোড়ায় ঠাকরেপন্থী শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়ে সমস্যা দেখা গেলেও তা প্রায় মিটে গিয়েছে বলে দাবি শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্ডিয়া ব্লকের কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের তৈরি করা কমিটির সঙ্গে বসে আসন রফার প্রাথমিক কথাবার্তা আমরা চুকিয়ে ফেলব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)