পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে কড়া আঘাত হেনেছে ভারত। আমেরিকায় গিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রশংসা করে এই কথাই জানালেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। শশী এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি শাসকদলের নয়, বিরোধী দলের সদস্য। তা সত্ত্বেও মনে করেন, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার সময় এসেছে। সন্ত্রাসবাদ এবং তাতে পাকিস্তানের সমর্থনের বিষয়টি গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সাতটি প্রতিনিধি দলকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। আমেরিকায় যে দলটি গিয়েছে, তারই নেতৃত্বে রয়েছেন তারুর। নিউ ইয়র্কে ৯/১১ হামলার স্মৃতিসৌধেও গিয়েছেন তারুরেরা। তার পরেই তিনি জানান যে, এই শহর এখনও সন্ত্রাস হামলার চিহ্ন বহন করছে। ভারতে সন্ত্রাস হামলার পরে তার প্রতিনিধি দলের নিউ ইয়র্কে আসা বিশেষ বার্তা বহন করে বলেই মনে করেন তারুর।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। তার পরেই পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতে সিঁদুর অভিযান চালায় ভারতীয় সেনা। নিউইয়র্কে ভারতীয় উপদূতাবাসে বসে তারুর জানান, ৭ মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের প্রশংসা করেন তিনি। জানান যে, বিরোধী দলের নেতা হয়েও তিনি মনে করেন, এই অভিযানের প্রয়োজন ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা জানেন, আমি সরকারের জন্য কাজ করি না। আমি একটি বিরোধী দলের সদস্য। তার পরেও আমি বলছি, বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কড়া ভাবে আঘাত হানার সময় এসেছে। আমি খুশি যে, ভারত তা-ই করেছে।’’
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন তিনি। কাশ্মীর বিষয়ে মধ্যস্থতা করার কথাও বলেছেন। ফলে সে দেশে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ এবং কাশ্মীর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তারুরদের কাঁধে। এই আবহে তারুর জানিয়েছেন যে, কেন ভারত এই অভিযান চালাতে একপ্রকার ‘বাধ্য’ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি— আন্তর্জাতিক দলিল, অভিযোগ, সব কিছুই করা হয়েছে।’’ কিন্তু পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের পরিকাঠামো নির্মূল করার চেষ্টা করেনি বলে জানিয়েছেন তারুর। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ওদেশে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকেই গিয়েছে...। আপনারা যা করবেন, তাই ফেরত পাবেন।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, ভারত যুদ্ধে আগ্রহী নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যুদ্ধে আগ্রহী নই। তার চেয়ে বরং নিজেদের অর্থনীতির উন্নয়ন, নাগরিকদের আধুনিক জগতে নিয়ে যেতে আমরা অনেক বেশি সচেষ্ট।’’ কিন্তু পাকিস্তান ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের লোভ ছাড়তে পারছে না। তারা ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর মাধ্যমে সেই স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, পহেলগাঁও হামলার পরে টিআরএফ (দ্য রেজ়িসট্যান্স ফ্রন্ট) দায় স্বীকার করেছে। জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গে যোগ রয়েছে সেই সংগঠনের। এর পরেও পাকিস্তান দায় অস্বীকার করেছে। ভারতে রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ কী ভাবে এর নিন্দা করেছেন তা-ও জানিয়েছেন তারুর।
তারুরের দলে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য, ভুবনেশ্বর কলিতা, শশাঙ্ক মণি ত্রিপাঠী, এলজেপি (রামবিলাস) সাংসদ সম্ভবী চৌধরি, টিডিপির হরিশ বালাযোগী, শিবসেনার মিলিন্দ দেওরা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সরফরাজ আহমেদ, আমেরিকায় নিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিংহ সান্ধু। আমেরিকা ছাড়াও তাঁরা যাবেন গায়না, কলম্বিয়া, পানামা এবং ব্রাজ়িলে।