Advertisement
০২ মে ২০২৪
Kashmir

মুসলিম বন্ধুকে কিডনি দিতে বাধা পরিবারের! আদালতে যাচ্ছেন কাশ্মীরের শিখ তরুণী

প্রাণের বন্ধু ২২ বছরের সমরিন আখতারকে নিজের একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর নিজেরই পরিবার। অযথা দেরি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মনজোতের (বাঁ দিকে) সঙ্গে সামরিন। ছবি: ফেসবুক

মনজোতের (বাঁ দিকে) সঙ্গে সামরিন। ছবি: ফেসবুক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩১
Share: Save:

হিংসা, সন্ত্রাস আর দাঙ্গাবিধ্বস্ত জম্মু ও কাশ্মীরে বন্ধুত্বের মর্মস্পর্শী নিদর্শন। মরণাপন্ন মুসলিম বন্ধুকে বাঁচাতে মানবতার নয়া নজির তৈরি করলেন উধমপুরের ২৩ বছরের শিখ তরুণী মনজ্যোৎ সিংহ কোহলি। প্রাণের বন্ধু ২২ বছরের সমরিন আখতারকে নিজের একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর নিজেরই পরিবার। অযথা দেরি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই কিডনি দেওয়ার ছাড়পত্র জোগাড় করতে শেষ পর্যন্ত আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মনজ্যোৎ।

“সমরিন আমার চার বছরের পুরনো বন্ধু। ও খুব ভাল বন্ধু হলেও ভেতরে ভেতরে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তা জানায়নি আমাকে। অন্য একজন বন্ধু আমাকে বিষয়টি জানায়। আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিল সমরিন। এখন ওর খারাপ সময়। তাই পাশে দাঁড়ানোটা আমার কর্তব্য। ওর অসুস্থতার কথা শোনার পরই আমি সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।” সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই জানিয়েছেন মনজ্যোৎ।

এই কঠিন সিদ্ধান্ত তিনি সহজে নিয়ে ফেললেও বাকি কাজটা খুব একটা সহজ হচ্ছে না মনজ্যোতের কাছে। প্রথম বাধা এসেছে পরিবারের কাছ থেকে। কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি ২৩ বছরের শিখ তরুণীকে। বন্ধুকে বাঁচানোর রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তাঁর কথায়, ‘‘কিডনি দিতে বাধা দিচ্ছে ‘শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’। অঙ্গদানের প্রাথমিক ছাড়পত্র পেলেও সেই প্রক্রিয়া কিছুতেই শুরু করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই আমি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: ৮.৫ তীব্রতার ভূমিকম্পে টালমাটাল হবে হিমালয়! মহাপ্রলয়ের সতর্কবার্তা বিজ্ঞানীদের

মনজ্যোতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের এই উপহার পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন সমরিনও। সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মনজ্যোতকে ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা আমার কাছে নেই। ওর কথা শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। তার পর ওই আমাকে নিয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ওর এই সিদ্ধান্তে পাল্টে গেল আমার গোটা জীবনটাই।’’

আরও পড়ুন: পণ না দেওয়ায় স্ত্রীর শরীরে এইডস‌্-এর জীবাণু ঢুকিয়ে দিলেন ডাক্তার স্বামী!

আপাতত মনজ্যোতের চিন্তা, মেডিক্যাল ছাড়পত্র থাকলেও কিডনি দান করা কেন যাচ্ছে না, তা নিয়ে। কারণ, এই টালবাহানায় আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে সমরিনের শরীরের অবস্থা। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ‘শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর অধিকর্তা ওমর শাহ। কোনও কোনও মহলের মতে, এক জন শিখ তাঁর মুসলিম বন্ধুকে কিডনি দিচ্ছেন, তা মেনে নিতে পারছেন না চিকিৎসকদের একাংশ। সেই কারণে আগ বাড়িয়ে বাধা তৈরি করছেন তাঁরা। কেউ আবার বলছেন, পরিবারের তরফে অনুমতি না মেলাতেই অঙ্গদান করতে দেওয়া হচ্ছে না মনজ্যোতকে। যদিও সে সবে গুরুত্ব দিতে নারাজ তিনি। “আমি জানি, আমার পরিবার হাসপাতালে নোটিস পাঠিয়েছে। ওঁরা কোনও দিনই অনুমতি দেবেন না। কিন্তু আমি এক জন প্রাপ্তবয়স্ক। আমার পরিবারের অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই”— বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত ঘোষণা তেইশের তরুণীর।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE