ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভেঙে পড়া সেই বেড়া। নিজস্ব চিত্র
কাঁটাতার দুই দেশকে আলাদা করে দিয়েছে। এ পার, ও পারের বিভাজন মানুষ কবেই মেনে নিয়েছে। মানতে পারেনি হাতির দল। শুধু ৬টি হাতিই জুড়ে রেখেছে দুই দেশকে। যখন খুশি তারা আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের সিলেটে ঢুকে পড়ে। আবার নিজের মর্জিতেই ফিরে আসে। নেই পাসপোর্ট, ভিসা, নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্নও।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান কিংবা অধুনাবাংলাদেশ, কোনও ভাবে ওই ভূখণ্ডকে আলাদা করা চলবে না, কড়া সিদ্ধান্ত ওই হস্তীযূথের। একে অমান্য করে একবার করিমগঞ্জ জেলার পাথারিয়া বনাঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়া বসে। দামাল-বাহিনী রীতিমতো বিদ্রোহ করে। বেড়া ভেঙে তছনছ করে দেয়। কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হলেও চলার পথে বাধা তারা মেনে নিতে পারেনি। পরে বনবিভাগ কেন্দ্রের কাছে ‘এলিফ্যান্ট করিডর’-এর প্রস্তাব দেয়। কেন্দ্রের সম্মতিতে এখন ২০০ মিটার এলাকা উন্মুক্ত। সেখানে রয়েছে বিএসএফের কড়া প্রহরা। করিডরের দুই প্রান্তে দু’টি টাওয়ার। উপর থেকে সীমান্ত রক্ষীরা গোটা এলাকায় নজর রাখেন। রয়েছে ফ্লাড লাইট।
বিএসএফ-এর ডিআইজি জে সি নায়েক বলেন, চোরাকারবারি বা অনুপ্রবেশকারীদের ওই পথ ব্যবহারের সুযোগ নেই। গ্রামবাসীদেরও ওই পথে না এগোতে বলা আছে। তবু কেউ এপার-ওপারের চেষ্টা করলে তাদের ঠেকানোর জন্য টাওয়ারেই রাখা পাম্প অ্যাকশন গান বা রাবার বুলেট। শুধু হাতিদেরই নির্বিবাদে সে পথে চলাচলের অধিকার। দলটিতে ছিল ৭টি হাতি। সব ক’টিই মহিলা। ২০১৭ সালে একটি হাতি মেদলি চা বাগানে বিদ্যুতের ছোবলে প্রাণ হারায়।
তাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রচুর। প্রায়ই পাথারকান্দি, লোয়াইরপোয়া, চেরাগি অঞ্চলে তাণ্ডব চালায়। খেতের ফসল তছনছ করে। বাড়িঘর ভেঙে ফেলে। দু’-তিনবার প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এই সংঘাতের জন্য মানুষকেই কাঠগড়ায় তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের এলাকা মানুষ দখল করেছে। বনজঙ্গল কেটে বসতি করেছে।’’ তবু লোকালয়ে নেমে এলে হাতি তাড়ানোর জন্য একটি স্কোয়াড গড়া হয়েছে। প্রশিক্ষিতরাই রয়েছেন তাতে। উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরাও। তাদের চিন্তা, ৫টি হাতিই চল্লিশোর্ধ্ব। একটি সামান্য ছোট। তাদের আশঙ্কা, একদিন করিডর, স্কোয়াড সবই থাকবে, হাতির দল থাকবে তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy