Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিলচরে মার্কশিট না পেয়ে ঝামেলা কলেজে

অন্যান্য স্কুল-কলেজে যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে হই হুল্লোড় চলছিল, শিলচরের স্বামী বিবেকানন্দ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড জুনিয়র কলেজে তখন ছড়িয়েছে উত্তেজনা।

ফল প্রকাশের পর। করিমগঞ্জের একটি স্কুলে। বৃহস্পতিবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

ফল প্রকাশের পর। করিমগঞ্জের একটি স্কুলে। বৃহস্পতিবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

অন্যান্য স্কুল-কলেজে যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে হই হুল্লোড় চলছিল, শিলচরের স্বামী বিবেকানন্দ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড জুনিয়র কলেজে তখন ছড়িয়েছে উত্তেজনা।

বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগের মোট ১৯৮ পরীক্ষার্থী এ বার এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে বসেছিলেন। কারও ফল প্রকাশ করেনি অসম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিষদ। কারণ জানতে ছাত্র-অভিভাবকরা অধ্যক্ষকে না পেয়ে উপাধ্যক্ষ অনিমেশ পুরকায়স্থকে ঘিরে ধরেন। সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি। অভিযোগ, তার জেরে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁকে জনরোষের মুখ থেকে উদ্ধার করে। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত জেলাশাসক অসীমকুমার ভট্টাচার্য জানান, আজ সকালে তিনি পরিষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ১০ দিনের মধ্যে ওই পড়ুয়াদের ফল প্রকাশ করা হবে বলে বোর্ড সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তাঁকে জানিয়েছেন। শিলচরের স্বামী বিবেকানন্দ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড জুনিয়র কলেজের এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সমস্যার শুরু হয় পরীক্ষার কয়েক দিন আগে। সব স্কুল-কলেজে অ্যাডমিট কার্ড বিলি করা হয়ে গেলেও, পরীক্ষার আগের দিনও অ্যাডমিট পাননি পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা কলেজে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় রেহাই মেলে। তড়িঘড়ি পরিষদ তাঁদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ড দেয়নি। তার বদলে শুধু তাদের রোল নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয়। তাও অন্য ছাত্রছাত্রীর মতো রোল নম্বর নয়। তা এক ভিন্ন ধরনের নম্বর।

কলেজের অধ্যক্ষ নবারুণ পুরকায়স্থ তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, সময়মতো পরীক্ষার ফর্ম পরিষদে পৌঁছতে না পারায় সমস্যা হয়েছিল। পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা হওয়ায় সব মিটে গিয়েছে।

কয়েক দিন পরই পরীক্ষা পরিষদ শিলচর সদর থানায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এজাহার দেয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, স্কুলটির কোনও নিয়মনীতি নেই। না আছে ভর্তির স্পষ্ট নির্দেশিকা, না পরীক্ষায় বসানোর। তাঁদের সন্দেহ, অধিকাংশ পরীক্ষার্থী ভুয়ো। অধ্যক্ষের যোগসাজসে এ ব্যাপারে একটি চক্র গড়ে উঠেছে, প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই অভিযোগ ছিল পরীক্ষা পরিষদের।

পুলিশ তদন্ত এখনও শেষ করে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে আজ ফলাফল প্রকাশিত হয়। ক্ষুব্ধ ছাত্র-অভিভাবকরা পরে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ফলপ্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। তিনিই যে পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার্থীদের জন্য অ্যাডমিট কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন, তাঁকে সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়। গৌরী শীল, মুন্না আহমেদের মতো অভিভাবক বলেন, ‘‘পাশ-ফেল যা-ই হোক, ছেলেমেয়েদের ফল প্রকাশ করা চাই। একে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছিল না। আগের দিনও তাঁরা পরীক্ষার প্রস্তুতি বাদ দিয়ে অ্যাডমিট কার্ডের জন্য লড়াই করেছে। পরে পরীক্ষা নেওয়া হল, এখন ফল প্রকাশ করা হবে না কেন?’’

২০০৪ সালে শিলচরের কাঁঠাল রোডে এই জুনিয়র কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় প্রতি বছর এই ধরনের কাণ্ড ঘটছে। অভিযোগ, পরীক্ষা পরিষদে এই কলেজের কোনও অনুমোদন নেই। অন্য কলেজের ছাত্র দেখিয়ে এতকাল পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা হতো। এ বার পরিষদের কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় কোনও কলেজ তাতে সায় দেয়নি। এতে বিপাকে পড়ে নবারুনবাবুরা জাল সই-সিল দিয়ে পরীক্ষার ফর্ম পাঠিয়েছিলেন পরিষদে। বিষয়টি ধরা পড়ার জেরেই এজাহার দেওয়া হয় এবং ফলাফলও আটকে যায়।

অতিরিক্ত জেলাশাসক অসীমকুমার ভট্টাচার্য আশা করছেন, পরিষদের সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যখন ১০ দিনের মধ্যে ফলপ্রকাশের জন্য কথা দিয়েছেন, তখন উদ্বেগের কিছু নেই। ফলপ্রকাশ করেও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলতে পারে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কলেজটিতে তালা পড়ে যাওয়ায় উদ্বেগে মাধ্যমিক পাশ ছাত্রছাত্রীরাও। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক শাখা থেকে যারা দু’দিন আগে পাশ করেছে, আজ তাঁদের মার্কশিট বিতরণের কথা ছিল। দূরদূরান্ত থেকে ছাত্র-অভিভাবকরা গিয়ে নিরাশ হয়ে ফেরেন। তাঁদের সমস্যা, মার্কশিট হাতে না পেলে অন্যত্র উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য আবেদন করা সম্ভব হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silchar Student Collage Marksheet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE