ধড় থেকে পা পর্যন্ত পক্ষপাতগ্রস্ত, অসাড়। গত ১২ বছর ধরে নড়াচড়া করতে পারেন না নয়ডার ৩১ বছর বয়সি যুবক হরিশ রানা। তিনি কোয়াড্রিপ্লেজিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। এমনকি, বাইরের জগৎ বা নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেও তাঁর কোনও চেতনা নেই। কেবল আছে প্রাণটুকু। তাঁকে কি ‘পরোক্ষ মৃত্যু’ (প্যাসিভ ইউথানেসিয়া) দান করা যায়? খতিয়ে দেখার জন্য নয়ডা জেলা হাসপাতালে একটি মে়ডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই বোর্ডকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
ডাক্তারি পদ্ধতিতে হরিশের নিষ্কৃতিমৃত্যু চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর বাবা-মা। জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে তাঁদের সন্তান শয্যাশায়ী। তাঁর সেরে ওঠার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। দিনের পর দিন অসুস্থতা আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ছেলের কষ্ট লাঘব করার জন্যই তাঁর মৃত্যু প্রয়োজন। তবে প্রত্যক্ষ নয়, হরিশের জন্য পরোক্ষ মৃত্যুদানের আবেদন জানানো হয়েছে। প্রত্যক্ষ মৃত্যুদানের ক্ষেত্রে রোগীর কষ্ট লাঘবের জন্য চিকিৎসক ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন কোনও ওষুধ দেন, যাতে দ্রুত মৃত্যু নেমে আসে। এ ক্ষেত্রে তা চাওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়ে, লাইফ সাপোর্ট তুলে নিয়ে মৃত্যুদানের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে বুধবার এই মামলার শুনানি হয়েছে। আদালত জানায়, যুবকের জীবনদায়ী চিকিৎসা স্থগিত করা যায় কি না, তা নিয়ে মে়ডিক্যাল বোর্ডকে প্রাথমিক রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে অনুরূপ আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হরিশের বাবা-মা। কিন্তু তখন আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। বলা হয়েছিল, রোগীকে বাড়িতেই রাখা হবে এবং চিকিৎসকেরা নিয়মিত তাঁকে দেখতে যাবেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সহযোগিতায় তাঁর চিকিৎসা চলবে। কিন্তু সহযোগিতার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ বার রোগীর বাবা-মায়ের বক্তব্য, তাঁদের সন্তানের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাঁকে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন।
পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন হরিশ। ২০১৩ সালে হস্টেলের পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান তিনি। সেই থেকে সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী যুবক। গত বছর এই মামলাকে ‘খুব কঠিন সমস্যা’ বলে উল্লেখ করেছিল শীর্ষ আদালত।