বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোট এবং কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশন কারচুপি করেছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার মতো কয়েকটি রাজ্যের উদাহরণও দিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। তার জবাবে বৃহস্পতিবারেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকেরা রাহুলকে অভিযোগের হলফনামা জমা দিতে বলেছিলেন। এ বার জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাহুলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে দাবি।
নির্বাচন কমিশনের তরফে শুক্রবার বলা হয়েছে, রাহুল গান্ধী হয় আইনি ঘোষণাপত্রের (হলফনামা) মাধ্যমে নিজের অভিযোগ পেশ করুন, অথবা ভিত্তিহীন অভিযোগ করার দায় স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান! সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে রাহুল অসম্মান করতে চাইছেন বলে কমিশনের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। রাহুল শুক্রবার আবার ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলে নিজের অনড় অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন আমার কাছে হলফনামা চেয়েছে। বলেছে, আমাকে শপথ নিয়ে অভিযোগ করতে হবে। আমি আগেই সংসদে ভারতীয় সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছি।’’
রাহুল বৃহস্পতিবার দুপুরে যে অভিযোগগুলি তুলেছিলেন, ইতিমধ্যেই তার একটির সত্যতা কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ধরা পড়েছে বলে শুক্রবার প্রকাশিত খবরে দাবি। লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্যে ‘ভোট চুরির উদাহরণ’ দিতে গিয়ে রাহুল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভায় ভয়ঙ্কর চুরি হয়েছে। সেখানে এক লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে।’’ তিনি জানান, বেঙ্গালুরুর ওই লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬ লক্ষ ২৬ হাজার ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ভোট। হারজিতের ব্যবধান ছিল ৩২ হাজারের সামান্য বেশি। আর শুধু মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে দুই দলের তফাত ছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি ভোট। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ওই এলাকায় ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের একচিলতে একটি ঘরে ৮০ জন ভোটারের নাম নথিভুক্তির তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ প্রকাশিত খবরে দাবি।
মহাদেবপুরা বিধানসভায় রাহুলের দেওয়া ঠিকানায় খুঁজতে গিয়ে ৪৭০ নম্বর বুথের আউটার রিং রোডের একটি বাড়ির দেড়শো বর্গফুটের ঘর থেকে ৮০ জন ভোটারের ‘সন্ধান’ মেলায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ৩৫ নম্বর মুনি রেড্ডি গার্ডেনের ওই বাড়ির ঠিকানায় নিবন্ধিত ভোটারদের কেউই সেখানে থাকেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এমনকি, ওই বাড়ির মালিক দীপঙ্করও সেখানকার নিবাসী নন! তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বলে সরকারি তথ্যে জানা গিয়েছে। মহাদেবপুরা-সহ কর্নাটক জুড়ে ভোটার তালিকায় কারচুপির সমীক্ষা করতে ইতিমধ্যেই সে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের কাছে বার্তাও পাঠিয়েছেন রাহুল। নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল ভোটার তালিকা না দেওয়ায় ভোটার তালিকায় কারচুপির আশঙ্কা বাড়ে বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা। সেই সঙ্গে কার্যত তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই শুক্রবার তাঁর প্রশ্ন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কেন বিজেপির এজেন্টের মতো কাজ করছে?’’