মুসলিম প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে অস্বস্তিতে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। প্রশ্ন উঠেছে কেন উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও মুসলিমের নাম ঘোষণা করল না মহাজোট? তেজস্বীর পাল্টা প্রশ্ন, এনডিএ-র তো উচিত ছিল অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা সমাজের নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা। কিন্তু বিজেপির আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। ভোটের পরে নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে এনডিএ জোটের বিবাদ উস্কে দেওয়ার কৌশল নেন তিনি।
অন্য দিকে, তেজস্বী তথা আরজেডি-কংগ্রেস জোটকে আক্রমণ শানিয়ে বিজেপি নেতা অমিত শাহ বলেন, ‘‘মহাজোট ক্ষমতায় এলে অপহরণ, তোলাবাজি, খুন-ডাকাতির মতো অপরাধমূলক শিল্পের বাড়বাড়ন্ত হবে। যেমন অতীতে হয়েছিল।’’
দিন কয়েক আগে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী এবং মাল্লা সমাজের নেতা মুকেশ সাহানিকে মহাজোটের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণার পরেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। অভিযোগ ওঠে, মুসলিমদের সমর্থন যে দলের মূল ভিত্তি সেই আরজেডি মুসলিমদের এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছে। আজ সংবাদমাধ্যমের কাছে তেজস্বী দাবি করেন, মুসলিমরা যেমন আরজেডির সঙ্গে রয়েছেন, তেমনি আরজেডি মুসলিমদের পাশে রয়েছে। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে। তেজস্বীর কথায়, ‘‘আমায় যে দিন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল, সে দিনই বলা হয়েছিল জোটে একাধিক উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক অনাবশ্যক।’’ ঘরোয়া ভাবে আরজেডি নেতৃত্বের বক্তব্য, ক্ষমতায় এলে মুসলিম সমাজের কোনও প্রবীণ নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার কথা ভেবে রেখেছে দল।
উল্টে এনডিএ কেন নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করছে না সেই বিতর্ক ফের একবার উস্কে দিয়েছেন লালু-পুত্র। এ-ও বলেন, ‘‘আসলে পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতি বিজেপির ঘৃণা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সেই কারণে নিজেরা পিছিয়ে পড়া সমাজের নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তো করছেই না, উল্টে আমরা কেন মাল্লা সমাজের মুকেশ সাহনিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। সাহনিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী করায়, অমিত শাহ কেন এত ক্ষিপ্ত?’’ রাজনীতিকদের মতে, এনডিএ-র অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া সমাজের ভোট টানতেই সাহনিকে প্রার্থী করেছে আরজেডি। সেই সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে পিছিয়ে পড়া সমাজের মানসিক দূরত্বের কথা কৌশলগত কারণেই উস্কে দিচ্ছেন।
আজ বিহারশরিফে সভায় বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক শুধরে গিয়েছে বলে দাবি করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা যে ভাল হয়েছে, তার উদাহরণ হল অতীতে তিন-চার পর্বে ভোট হত, এখন দু’পর্বে ভোট হচ্ছে। আগামী দিনে এনডিএ জোট ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলার আরও উন্নতি হবে। তখন এক পর্বে ভোট হবে। কিন্তু আরজেডি ক্ষমতায় এলে খুন, ডাকাতি, অপহরণের মতো অপরাধ শিল্পের বাড়বাড়ন্ত হবে, জঙ্গলরাজ ফিরে আসবে।’’
জঙ্গলরাজ নিয়ে আক্রমণের সুযোগ আজ করে দেন আরজেডি নেতা কোয়ারি সোয়েবই। খগড়িয়ায় তেজস্বীর উপস্থিতিতে তিনি দাবি করেন, তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী হলে ওয়াকফ আইন প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা হবে। বিজেপির আইটি শাখার মুখপাত্র অমিত মালবীয় পাল্টা আক্রমণে বলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে ক্ষমতায় এসে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা, জঙ্গল রাজ ফিরিয়ে আনাই আরজেডি-কংগ্রেসের লক্ষ্য।’’ মুঙ্গেরের জনসভায় শাহ বলেন, ‘‘এই লড়াই মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার লড়াই নয়, জঙ্গল রাজ বনাম বিকাশ রাজ-কে বেছে নেওয়া লড়াই। লঠবন্ধন (অপরাধীদের জোট)-এর নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ নেই। এখন জনতাকে বেছে নিতে হবে তাঁরা কাকে ক্ষমতায়দেখতে চান।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)