চার হিন্দুজা ভাই। ফাইল চিত্র।
পারিবারিক সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে এ বার আইনি সঙ্ঘাত হিন্দুজা পরিবারের অন্দরে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চার ধনকুবের ভাইয়ের লড়াই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে আদালতে।
হিন্দুজা গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা)। আর তার ভাগাভাগি নিয়েই দ্বন্দ্ব চার ভাই, শ্রীচাঁদ, গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোকের। হিন্দুজা ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বছর খানেক আগেই আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বড়ভাই শ্রীচাঁদ।
প্রয়াত পরমানন্দ হিন্দুজা প্রতিষ্ঠিত হিন্দুজা শিল্পগোষ্ঠীর বয়স ১০৭ বছর। পরমানন্দের প্রয়াণের পর থেকে যৌথ ভাবেই পারিবারিক ব্যবসা চালিয়েছেন চার ভাই। গাড়ি, ব্যাঙ্কিং, গ্যাস, তেল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৮টি দেশ জুড়ে ছড়ানো হিন্দুজাদের ব্যবসা। প্রতি বছর ‘নিয়ম করে’ ব্রিটেনের সেরা ধনীদের তালিকায় ঠাঁই পান হিন্দুজা ভাইয়েরা। কিন্তু সুখের সেই সংসারেই এখন ঘনিয়েছে অশান্তির মেঘ।
৮৫ বছরের শ্রীচাঁদ এখন গুরুতর অসুস্থ। স্মৃতিভ্রংশ রোগেও ভুগছেন। তাঁর হয়ে আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই মেয়ে বিনু এবং শানু। শানুর ছেলে করমই বকলমে দাদুর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা তদারকি করছেন।
সম্প্রতি জেনিভায় একটি সাক্ষাৎকারে করম বলেছেন, ‘‘দাদু বলতেন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে সপ্তাহে এক বার সদস্যদের একত্রিত হয়ে সিনেমা দেখা উচিত। আমরা সে রকমই করতাম। সকলে একত্রিত হয়ে সবকিছু ভাল-খারাপ ভাগ করে নিতাম।’’ কিন্তু এ ভাবে কয়েক দশক ধরে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলেও এ বার হিন্দুজা সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।
২০১৪ সালের একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ঘিরেই হিন্দুজা পরিবারে বিবাদের সূচনা। চার হিন্দুজা ভাইয়ের সই করা ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, কোনও এক ভাইয়ের হাতে থাকা সম্পত্তি আদতে চার ভাইয়েরই। যে কোনও ভাই অন্য ভাইদের নিয়োগ করতে পারবেন সেই সম্পত্তির তদারকিতে। কিন্তু শ্রীচাঁদ এবং তাঁর কন্যাদের দাবি, ওই যৌথ ঘোষণাপত্রের কোনও আইনি বৈধতা নেই। তাই শ্রীচাঁদের নামে থাকা ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ডের হিন্দুজা ব্যাঙ্ক তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি। গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোক সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা এখনও ‘অখণ্ড হিন্দুজা সাম্রাজ্যের’ তত্ত্বেই অনড় রয়েছেন।
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস’-এর পারিবারিক ব্যবসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কে রামচন্দ্রন অবশ্য মনে করেন শেষ পর্যন্ত তাঁদের পক্ষে পুরনো নীতি বজায় রাখা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ‘‘গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোকের সমাজতান্ত্রিক ভাবনা বাস্তবায়িত করা এখন খুবই কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy