পহেলগাঁও হামলার পরে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের অনেক সমস্যা মিটতে পারে। এই চুক্তির বাধ্যবাধকতার কারণে এত দিন যে কাজ আটকে ছিল, এ বার সেগুলি বিনা বাধায় এগোবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ইকোনমিক টাইম্স সরকারের সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, আপাতত উপত্যকা অঞ্চলে মোট পাঁচটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে নজর রয়েছে কেন্দ্রের। ওই প্রকল্পগুলির কাজ এগিয়ে নিয়ে গেলে কাশ্মীরে বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটাই মিটে যাবে। সিন্ধু চুক্তির কারণে এই সমস্ত প্রকল্পে কিছু বাধ্যবাধকতা থেকে গিয়েছিল। এখন আর তা মানছে না নয়াদিল্লি।
জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যতম বড় সমস্যা বিদ্যুতের ঘাটতি। ফলে সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত উপত্যকার কাছে বড় সুযোগ। সরকারের নজরে আপাতত রয়েছে ৮০০ মেগাওয়াটের বারসার প্ল্যান্ট, ২৬০ মেগাওয়াটের দুলহস্তী ২ প্রকল্প, ১৮৫৬ মেগাওয়াটের সোয়ালকোটে প্রকল্প, ২৪০ মেগাওয়াটের উরি স্টেজ ২ এবং ৯৩০ মেগাওয়াটের কিরথাই ২ প্রকল্প। কোনওটির কাজ মাঝপথে, কোনওটি এখনও প্রস্তাবের পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন:
-
হ্যাকিং ‘দুঃসাধ্য’! ভারতে নিষিদ্ধ বাছা বাছা চিনা অ্যাপে কথাবার্তা চলে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের, হাতিয়ার ‘স্যাটেলাইট ফোন’ও
-
ভারতের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক খবর প্রচার! পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ, কোপ শোয়েব আখতারের উপরেও
-
সিন্ধুর জল কী ভাবে আটকানো যাবে? স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি ভারত, আন্তর্জাতিক চাপ আসবে?
সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রাথমিক ভাবে দু’টি উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায় এই পাঁচ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে। প্রথমত, জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যুতের মৌলিক চাহিদা এবং ঘাটতি মেটানো এবং দ্বিতীয়ত, সিন্ধুর পশ্চিমের নদীগুলির জলে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় করা। পাঁচটি প্রকল্প থেকে একসঙ্গে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে, যা কাশ্মীরের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম।
একমাত্র উরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বারামুলা জেলায় বিতস্তা নদীর উপর অবস্থিত। বাকি প্রকল্পগুলি চন্দ্রভাগা নদীর উপত্যকায় পরিকল্পিত। তার মধ্যে বারসার, দুলহস্তী এবং কিরথাই রয়েছে কিশতওয়ার জেলায়। রামবন জেলার সোয়ালকোটে এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরে পরিকল্পিত সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর বাঁধের দৈর্ঘ্য ১৯২.৫ মিটার। তবে এই পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে সিন্ধু চুক্তির সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে শুধু উরি স্টেজ ২। বাকিগুলি চুক্তি অনুযায়ী এখনও অনুমোদিত নয়। তবে ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করায় এই প্রকল্পের কাজ এগোনোর কথা ভাবা যাচ্ছে। কাজ পরিকল্পনামাফিক এগোলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পেতে পারে কাশ্মীর।
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে, ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সিন্ধুর পূর্বের তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র জল। এ ছাড়া, সিন্ধু ও তার দুই উপনদী বিতস্তা (ঝিলম), চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে থাকবে পাকিস্তানের অধিকার। সিন্ধু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে এই জল ব্যবহার করলেও কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না। এই নদীর উপরে কোনও প্রকল্পের কাজ এগোনোর আগে উভয়পক্ষকে সম্মত হতে হবে। তবে পগেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তান যত দিন সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া না থামাচ্ছে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।