পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানা নিয়ে যখন দেশজুড়ে শোরগোল, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে, তখন জল নিয়ে দেশের দুই অঙ্গরাজ্যের ‘যুদ্ধ’ তুঙ্গে। সোমবারই পঞ্জাব সরকার বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশ করিয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, হরিয়ানার জন্য এক ফোঁটাও জল ছাড়বে না তারা। যমুনা ও সিন্ধুর জল নিয়ে যখন বিজেপিশাসিত দিল্লি এবং হরিয়ানার সঙ্গে আম আদমি পার্টি (আপ) পরিচালিত পঞ্জাব সরকারের দ্বন্দ্ব চরমে তখন এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, দেশের দুই প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা এবং পঞ্জাবের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হয়। আদালত এ-ও বলে, দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সমীচীন নয়।
জল নিয়ে দুই রাজ্যের অশান্তিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা করেছে ভাকরা-বিয়াস ব্যবস্থাপনা বোর্ড (বিবিএমবি)। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হয় হাই কোর্টের বিচারপতি প্রধান বিচারপতি শীল নাগু এবং বিচারপতি সুমিত গয়ালের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা এ সব আমাদের শত্রু দেশের বিরুদ্ধে করি। দয়া করে দুই রাজ্যের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি করতে দেবেন না।’’
বস্তুত, সিন্ধুর উপনদী শতদ্রুর (সাটলুজ়) উপরে রয়েছে ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ। পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে জল সরবরাহ করা হয় এই বাঁধের খালগুলির মাধ্যমে। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিলের জঙ্গিহানার পরে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যার জবাবে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। এই আবহে পাক সীমান্তবর্তী পঞ্জাবের সঙ্গে বিজেপিশাসিত হরিয়ানা ও দিল্লির সংঘাত বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ‘ভাকরা-বিয়াস ব্যবস্থাপনা বোর্ড’ (বিবিএমবি)-এর মাধ্যমে হরিয়ানার দাবি পূরণের জন্য পঞ্জাব সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এক ফোঁটা জল যাতে হরিয়ানায় না যায়, সে দিকে নজর দেওয়ার জন্য পঞ্জাব সরকারের তরফে নাঙ্গাল বাঁধের উপরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিবিএমবি। তাদের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘জলাশয়গুলি উপচে পড়ার অবস্থা হয়েছে। স্রোতের বিপরীতের রাজ্যগুলি শুখা হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি বদলের প্রয়োজন।’’ পাল্টা পঞ্জাব সরকারের তরফে আইনজীবী জানান, এই বিষয়টি শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার বিষয় এবং সেটায় কেবল রাজ্যের এক্তিয়ার আছে। তাই বিবিএমবি বলতে পারে না পুলিশের কী করা উচিত বা কোথায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তখন বিবিএমবি আদালত বলে আগামিকাল যদি একই কথা হিমাচল প্রদেশও ভাকরা-নাঙ্গাল নিয়ে একই কথা বলে, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। নাঙ্গাল দাম রয়েছে পঞ্জাবে। তাই বিতর্কের আশু সমাধান প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
দুই পক্ষের দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর আদালত জানিয়েছে মঙ্গলবারের মধ্যে এই মামলায় রায় দিতে পারে তারা। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্দেশ আসেনি।