Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরে মদত দেবই, হুমকি পাকিস্তানের

কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের পিছু হটার কোনও প্রশ্ন নেই। উল্টে জারি থাকবে কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন। প্রয়োজনে ‘শত্রুর’ বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতেও কসুর করা হবে না। কাশ্মীর নিয়ে গত দু’মাসে এমনিতেই তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
মাঝরাতে সেনা তল্লাশির প্রতিবাদে। বুধবার শ্রীনগরের পদশাহী বাগে পিটিআইয়ের ছবি।

মাঝরাতে সেনা তল্লাশির প্রতিবাদে। বুধবার শ্রীনগরের পদশাহী বাগে পিটিআইয়ের ছবি।

কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের পিছু হটার কোনও প্রশ্ন নেই। উল্টে জারি থাকবে কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন। প্রয়োজনে ‘শত্রুর’ বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতেও কসুর করা হবে না। কাশ্মীর নিয়ে গত দু’মাসে এমনিতেই তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। তার মধ্যেই আজ পাক সেনার প্রতিরক্ষা দিবসের অনুষ্ঠানে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আরও উচ্চগ্রামে সরব হলেন পাক সেনা প্রধান রাহিল শরিফ। বললেন, ‘‘কাশ্মীরকে স্বাধীন করার প্রশ্নে আমরা কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাব। কারণ, কাশ্মীর হল আমাদের লাইফ লাইন।’’

অস্ত্র ও জঙ্গি পাঠিয়ে কাশ্মীরকে অশান্ত করতে পাকিস্তান যে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়, এই অভিযোগ দিল্লির
নতুন নয়। আজ রাহিেলর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, কার্যত ভারতের দাবিতেই আজ সিলমোহর দেন পাক সেনাপ্রধান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাহিল যেটা নৈতিক ও কূটনৈতিক সাহায্যের কথা বলেছেন, তা আসলে অস্ত্র, জাল টাকা ও জঙ্গি পাঠিয়ে কাশ্মীরকে অস্থির করে রাখার কৌশল। এটাই যে তাদের জাতীয় নীতি তা সেনাপ্রধানও মেনে নিয়েছেন।’’

কেন্দ্র মনে করছে, প্রধানত দু’টি কারণে আজ এ ভাবে মুখ খুলেছেন রাহিল শরিফ। প্রথমত, কাশ্মীর প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ পাত্তা না পাওয়ায় অস্বস্তিতে ইসলামাবাদ। হিজুবল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে গত দু’মাস ধরে অশান্ত উপত্যকা। দিল্লি থেকে যাওয়া সবর্দলীয় প্রতিনিধি দলের সফরের পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। দাঙ্গা-হাঙ্গামার এই ছবিকেই কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর তাস খেলে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনকে চিঠি লিখে হস্তক্ষেপের দাবি ছাড়াও ২২টি দেশে কূটনীতিক পাঠিয়ে ভূ-স্বর্গে ভারতের সেনা কী ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে সেই ছবি তুলে ধরতে তৎপর হয় ইসলামাবাদ। আন্তর্জাতিক মহলে অবশ্য তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। উল্টে দিন কয়েক আগে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি ভারতে এসে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়ে যান ইসলামাবাদকে। মার্কিন বিদেশ দফতর থেকে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ২৬/১১-র
হামলার বিষয়ে সব তথ্য জানাতে হবে পাকিস্তানকে। বাতিল হয়ে যায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মার্কিন সাহায্যও।

দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর থেকেই পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বালুচ স্বাধীনতাকামী নেতারা। জারি রয়েছে সংঘর্ষ। দিল্লির অভিযোগ, বালুচিস্তান ও
গিলগিটে দমননীতি চালায় ইসলামাবাদ। তাতে বিশেষ সুবিধে করতে পারছে পাক সেনা। বহু ক্ষেত্রে বালুচ স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ়যুদ্ধে জমি হারাতে হচ্ছে পাক সেনাবাহিনীকে।

সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মহিলারা। ছবি: পিটিআই।

পাক সেনাকে চাঙ্গা করতেই আজ কাশ্মীরের তাস খেলেন পাক সেনাপ্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘বুলেট বৃষ্টি করে কাশ্মীরের মানুষের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। বরং তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের আশা-আকাঙ্খা কী, জানতে হবে। তবেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান আদপেই কাশ্মীর প্রশ্নে পিছিয়ে আসবে না। কাশ্মীর হলো আমাদের লাইফ লাইন।’’

বালুচিস্তানের অশান্তির পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে বলে সরব ইসলামাবাদ। আজ রাহিল বলেন, ‘‘আমরা শত্রুর প্রকাশ্য ও গোপন উদ্দেশ্য জানি। আমরা যেমন বন্ধুকে চিনি, তেমনই শত্রুকেও। কী করে বন্ধুত্ব করতে হয়, কী ভাবে শত্রুতা, দু’টোই জানা আছে।’’ তিনি
বলেন, ‘‘প্রচলিত ও অপ্রচলিত, দু’ভাবেই যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আমরা। আগেও আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী ছিল। এখন তা দুর্ভেদ্য।’’

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, ওই হুঁশিয়ারের ফল দেখা যাবে সীমান্তে। উৎসাহিত হবে জঙ্গিরা। বাড়বে উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়। যার সুযোগ নিয়ে ভারতে জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা করবে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে আজ ভারতীয় সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মূল বৈঠকটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়ে হলেও, কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অশান্তি ও জঙ্গি অনুপ্রবেশ কী ভাবে আটকানো যায় তা নিয়েও কথা হয় তাঁদের।

দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার
আব্দুল বাসিতকে আজ ডেকে পাঠায় বিদেশ মন্ত্রক। কাল করাচিতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কথা ছিল সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম বাম্বাওয়ালের। কিন্তু তিনি যখন অনুষ্ঠানে যাবেন বলে গাড়িতে উঠছেন, তখন জানানো হয় অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। এ ভাবে
শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বাতিল করা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিরোধী এবং ভবিষ্যতে এ ধাঁচের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য বাসিতকে সতর্ক করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

Kashmir Pakistan threaten
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy