E-Paper

একাই ধর্না, কংগ্রেসকে ফের খোঁচা তৃণমূলের

বুধবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৮টি বিরোধী দলের সাংসদেরা একযোগে রওনা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র দফতরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৯
Sudip Bandyopadhyay

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আজ কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৮টি বিরোধী দল আদানির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে একযোগে আন্দোলন করল। এই মঞ্চে অনুপস্থিত থাকল তৃণমূল। দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সাম্প্রতিক সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আমরা অন্য কারও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। তৃণমূল কংগ্রেস নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে প্রতিবাদ করবে। আমাদের রাজ্যে কংগ্রেস সম্পূর্ণ রূপে বিজেপি এবং সিপিএমের সঙ্গে সংযোগ রেখে চলছে, তাই আমরা কংগ্রেস নেতাদের ডাকা বৈঠকে হাত মেলাতে পারি না।”

কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে সেখান থেকে আসলে পালাতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তাঁরা মোদীকে ক্রুদ্ধ করতে চাইছে না। আর সে কারণে বাহানা হিসাবে সাগরদিঘির ভোটের ফলাফল এবং আমাকে তুলে ধরছে। তৃণমূল আসলে মোদী বিরোধিতার প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।”

অধীরবাবুর ব্যাখ্যা, “সাগরদিঘির গতবারের বিধানসভা ফলাফলের সঙ্গে এ বারের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের ঘরে ১৭ শতাংশ ভোট এসেছে তৃণমূল থেকে আর ১০ শতাংশ এসেছে বিজেপি-র থেকে। তা হলে তৃণমূলের তো আগে খোঁজ করা উচিত, তাদের গড়ের ১৭ শতাংশে ভাঙন ধরল কেন? আসলে এই এলাকায় তৃণমূল আগন্তুক, কংগ্রেসের পুরনো পরম্পরা রয়েছে। সেই কংগ্রেসের ভোটাররা তৃণমূলের অপশাসনের কারণে ঘরে ফিরছে।” তাঁর বক্তব্য, “যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ক্ষমতা দখল করে মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন তিনি ভোট তৈরি করেননি! কংগ্রেস, সিপিএমের ভোটাররাই তাঁকে ভোট দিয়েছিলেন। সব সময়ই এটা হয়। ভোট কারও নিজস্ব সম্পত্তি নয়।”

আজ কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৮টি বিরোধী দলের সাংসদেরা একযোগে রওনা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র দফতরে। বিজয় চকের কাছে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। আগামিকাল সকালে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে তাঁর ঘরে বিরোধী দলের নেতাদের একটি বৈঠক ডেকেছেন। তাঁর তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তৃণমূলকেও। কিন্তু সেই বৈঠকে যাবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সংসদ দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যাচ্ছে দেখে দুপুরে ফোন করে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খোঁজ নেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ সকালে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেস। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল প্রমুখ। পরে সুদীপ বলেছেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক যে সংসদের অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে চলতে পারছে না। ক্ষমতাসীন দল হোক অথবা প্রধান বিরোধী দল, পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত। ফলে সাধারণ মানুষের বিষয় তুলে আনার সুযোগ কমছে।” আজকের ধর্নার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল নেতৃত্ব। সুদীপের কথায়, “অনেক দলের কাছে পেট্রোপণ্য বৃদ্ধির বিষয়টি আর তত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কাছে তার গুরুত্ব অপরিসীম।’’

পাশাপাশি তৃণমূলের রাজ্যসভার তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা যে ভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে একের পর এক কদর্য মন্তব্য করে চলেছেন, তাতে আমরা তাঁদের সঙ্গে চলতে পারি না। সাগরদিঘির ভোটের পর তিনি আমাদের নেত্রী এবং মোদীর যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি এবং সিপিএমের সঙ্গে ঘরোয়া ভাবে সমঝোতা করেছে কংগ্রেসই।” ডেরেক জানান, তিনি শিবসেনা, আপ, বিআরএ-র মতো বিরোধী দলগুলিকে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছেন গত রাতেই। আজ কংগ্রেসের কিছু নেতাকেও অসন্তোষ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বহরমপুরে নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে অধীর চৌধুরী শুভেন্দু অধিকারীর পায়ে ঝাঁপ দিয়েছেন!”

কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলকে লড়তেই হবে। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তখনও আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের মতপার্থক্য ছিল, কিন্তু কংগ্রেস তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সিপিএমকে হারানো। আজও বিজেপি-র বিরুদ্ধে সবাই একজোট হচ্ছে। আপ-এর সঙ্গে তো আমাদের সবচেয়ে বেশি লড়াই। আবার কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামের লড়াই। সে সব রাজ্যস্তরে রেখে আমরা জাতীয় স্তরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু মমতা যখন তা করছেন না, তখন মনে হচ্ছে যেন বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্কের নতুন রাস্তা পোক্ত করতে চাইছে তৃণমূল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy