Advertisement
E-Paper

শৌচ অসম্মান কাটবে কবে, আরও ১৫ বছর!

বাবা মায়ের কাছে শৌচালয়ের দাবি করেছিল খুশবু কুমারী । শৌচালয় না থাকার অসম্মানে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। সবাই হয়ত এই পথে যায় না, কিন্তু অসম্মান কুরে কুরে খায় গ্রামীণ ভারতের এরকমই বহু মেয়েকে। এর হাত থেকে উদ্ধার কবে সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্তত ১৫ বছরের আগে নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ১৯:২২

বাবা মায়ের কাছে শৌচালয়ের দাবি করেছিল খুশবু কুমারী । শৌচালয় না থাকার অসম্মানে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। সবাই হয়ত এই পথে যায় না, কিন্তু অসম্মান কুরে কুরে খায় গ্রামীণ ভারতের এরকমই বহু মেয়েকে। এর হাত থেকে উদ্ধার কবে সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্তত ১৫ বছরের আগে নয়। যে হারে এই প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে তাতে ভারতের ঘরে ঘরে শৌচালয় তাতে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে অন্তত ২০৩০।

সরকার বদলায়। বদলায় পরিকল্পনার নাম। হুহু করে অর্থ বরাদ্দ বাড়ে। আরও এগিয়ে আসে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার সীমা। ছোট-বড় সরকারি বাবুর উপরে চাপ বাড়ে। কিন্তু আদৌ সময়ের মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছন সম্ভব কি? প্রচারের ঢক্কানিনাদে হারিয়ে যায় সে প্রশ্ন। যেমন হচ্ছে অধুনা ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ নিয়ে।

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। আম-ভারতবাসীর জন্য শুধু এটুকুই জোগাড় করতে গত ৬৮ বছর ধরে হিমসিম খেয়েছে সরকার বাহাদুর। কিন্তু এ তিনই তো সব নয়। বাড়ি পিছু দরকার যে একটি শৌচালয়েরও। শহুরে চোখে সামান্য মনে হলেও বড় জরুরি দরকার। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্যের হাল ফেরাও যে মুশকিল। ‘ইন্ডিয়া অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি’— বইটিতে এ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন স্বয়ং অমর্ত্য সেন। সঙ্গে জঁ দ্রেজও। এ ছাড়াও বিভিন্ন আলোচনায় বার বার এ কথা তুলেছেন অমর্ত্য সেন। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে অমর্ত্য সেনের অস্থিরতার কারণ পরিষ্কার হয়ে যায়। চাকচিক্যে চোখ ধাঁধানো এই ভারতের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ আজও উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম সারেন। গ্রামে প্রায় ৬৭ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় নেই।

না, সরকার নির্বিকার থাকেনি। ইউপিএ-র আমলেই তৈরি হয়েছিল ‘নির্মল ভারত অভিযান’। লক্ষ্য ছিল ২০২২-এর মধ্যে গ্রামের প্রতি বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করা। মোদী ক্ষমতায় এলেন। পরিকল্পনার নাম পাল্টে হল ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। লক্ষ্য একই। কিন্তু সময়সীমা এগিয়ে এল ২০১৯-এ। চারপাশে সাজসাজ রবরব। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনে বন্যা। অনেক বিষয়ে দ্বিমত হলেও এ বিষয়ে মোদীর এই ‘সাধু’ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন অমর্ত্য সেনও।

কিন্তু ২০১৯-এর মধ্যে কি সব বাড়িতে শৌচালয় তৈরি সম্ভব? পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে। এখনও প্রায় ১১ কোটি বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করতে হবে। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০১৫-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৫৭ লক্ষ ২০ হাজার শৌচালয় তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮৮ লক্ষ শৌচালয় তৈরি হয়েছে ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে। তার পরে চার বছরে সেই গড় ৫০ লক্ষও ছুঁতে পারেনি। এ ভাবে চললে হিসেব বলছে, লক্ষ্য ছুঁতে ১৫ বছর লেগে যাবে। কিন্তু হাতে তো দেওয়া আছে মাত্র চারটি বছর!

রাজ্য

গ্রামের বাড়িতে শৌচালয় নেই (শতাংশ)

ঝাড়খণ্ড

মধ্যপ্রদেশ

ছত্তীসগঢ়

ওড়িশা

বিহার

রাজস্থান

উত্তরপ্রদেশ

তামিলনাড়ু

কর্নাটক

গুজরাত

ভারত

৯১.৬৭

৮৬.৪২

৮৫.১৫

৮৪.৬৮

৮১.৩৯

৭৯.৮৭

৭৭.১৩

৭৩.২৭

৬৮.১১

৬৫.৭৬

৬৭.৩৩

শৌচালয় নিয়ে বিশেষ করে খারাপ অবস্থা ঝাড়খণ্ডের। সেখানে গ্রামের ১০টি বাড়ির মধ্যে ন’টিরই নিজস্ব শৌচালয় নেই। এর পরে পর পর আছে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, গুজরাত। তালিকার শেষের দিকে কেরলের উজ্জ্বল উপস্থিতি। সেখানে গ্রামের মাত্র ৫.৬ শতাংশ বাড়িতেই শৌচালয় নেই। ২০১১-’১৫-এর মধ্যে শৌচালয় তৈরি হয়েছে দু’কোটিরও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শৌচালয় তৈরি হয়েছে উত্তরপ্রদেশে (২৯.৭ লক্ষ), তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ (২৫.১ লক্ষ)। এর পরে ক্রমান্বয়ে আছে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, কর্নাটক।

চার্চিল বলেছিলেন, ‘‘লাই, ড্যাম লাই, স্ট্যাটিস্টিকস।’’ চার্চিল-এর উক্তি অগ্রাহ্য করে, দুর্নীতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেও, ২০১৯-এর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর অঙ্ক কিন্তু মিলছে না। হিসেব বলছে, চার নয়, এ ভাবে চললে সময় লাগবে ১৫ বছর। উঠছে আরও কয়েকটি প্রশ্ন। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরি করে দিলেই কি কাজ শেষ? শৌচালয় তৈরি হলেই কি তার ব্যবহার হয়? না হলে তো পুরো পরিকল্পনাই মাঠে মারা যাবে। শৌচালগুলি ব্যবহার হচ্ছে কি না তা-ও দেখা দরকার। সব মিলিয়ে ব্যবহারকারীর সামগ্রিক সচেতনতা দরকার।

কিন্তু শুধু ‘বিদ্যা বালন’-এর বিজ্ঞাপনই কি এই সচেতনতা নিয়ে আসবে? এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন মাঝেমধ্যেই টেনে আনেন বাংলাদেশের কথা। ভারতের থেকে অনেক গরিব দেশ হয়া সত্ত্বেও মাত্র ৮ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় নেই। প্রচুর অর্থব্যয়ই নয়, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গ্রামে ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করে প্রচার চালানো হয়েছিল। জোর দেওয়া হয়েছিল মহিলাদের সচেতনতার উপরে। বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল ‘ব্রাক’, ‘গ্রামীণ ব্যাঙ্ক’-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। তাই শুধু শৌচালয় নয়, জনস্বাস্থ্যের অন্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাফল্য চোখ টাটানোর মতো।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

বাড়িতে শৌচাগার নেই, আত্মঘাতী প্রতিবাদী তরুণী

toilet house toilets 15 years
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy