ঘণ্টাখানেক হেঁটে পাহাড়ের মাথায় চড়ছেন। তার পরে কড়া রোদে পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে অপেক্ষা। এই বুঝি এল একটা দাগ! কেউ কেউ আবার ইন্টারনেট সংযোগ পেতে গাছে ঝুলিয়ে দেন মোবাইল। তাতেও দেখা মেলে না নেট সংযোগের সেই রেখার। আসে না ওটিপি। মহারাষ্ট্রের নান্দুরবার জেলার ধাড়গাঁও তালুকের এখন এটাই ছবি। ‘লাডকি বহিন যোজনা’-র টাকা পেতে ই-কেওয়াইসি করার জন্য এ ভাবেই সকাল থেকে পাহাড়ের মাথায় হত্যে দিচ্ছেন স্থানীয় জনজাতি মহিলারা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগের দুরবস্থা। তাঁদের চিন্তা, সময়সীমার মধ্যে ই-কেওয়াইসি না হলে পাবেন না টাকা।
এ রাজ্যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো ২০২৪ সালের জুন মাসে ‘মুখ্যমন্ত্রী লাডকি বহিন যোজনা’ চালু হয় মহারাষ্ট্রে। ২১ থেকে ৬৫ বছরের মহিলা, যাঁদের পারিবারিক রোজগার বছরে আড়াই লক্ষ টাকার কম, তাঁদের মাসে ১,৫০০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সে রাজ্যের সরকার। সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্র সরকার নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, এই যোজনার সুবিধা পেতে গেলে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ই-কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) পূরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে এই ই-কেওয়াসি পূরণ করতে হয়? এটি করতে গেলে ‘লাডকি বহিন’ যোজনার পোর্টালে গিয়ে ই-কেওয়াসির আবেদনপত্র খুলতে হবে। সেখানে সব তথ্য পূরণ করতে হবে। আধার নম্বর, ক্যাপচা কোড দিতে হবে। তার পরে উপভোক্তার মোবাইলে একটি ওটিপি যায়। সেই ওটিপি ফর্মে ভরতে হবে। আর তা করতে গিয়েই বিপাকে পড়ছেন খার্দি খুর্দ গ্রামের মহিলারা। ওই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই জনজাতি সম্প্রদায়ের। মহিলাদের অভিযোগ, দীর্ঘ পথ হেঁটে পাহাড়ের মাথায় গিয়ে সামান্য সময়ের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ মিলছে। ওই সময়ের মধ্যে কোনও মতে ফর্মে ভরা গেলেও ওটিপি আসছে না মোবাইলে। গ্রামের মহিলাদের উদ্বেগ, সময়ের মধ্যে হয়ত ই-কেওয়াসি তাঁরা পূরণ করে উঠতে পারবেন না।
এই যোজনার সুবিধাপ্রার্থী সেভিবাই পাওরা বলেন, ‘‘ই-কেওয়াসি করাতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও হচ্ছে না। সরকার সাহায্য না করলে আমরা হয়তো আর কোনও সুবিধা পাব না। নিজেদের দোষে নয়।’’ এই মহিলাদের সাহায্য করছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু তাতেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। গ্রামের তহসিলদার ধ্যানেশ্বর সাপকালেও মেনে নিয়েছেন সমস্যার কথা। তিনি জানান, চার-পাঁচ মাস আগে মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়েছে। কিন্তু সিগন্যাল খুবই দুর্বল। মহিলা উপভোক্তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে।