Advertisement
E-Paper

বুলেটবিদ্ধদের নিয়ে হাসপাতালমুখো অ্যাম্বুল্যান্স আটকে পুলিশি তাণ্ডব ত্রিপুরায়, ভিডিয়ো ভাইরাল

ওই ভিডিয়োতে যে অডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে তাতে শোনা যাচ্ছে আহতদের আর্ত চিৎকার। খুব কাঁপতে থাকা একটি ভিডিয়োতে শোনা যাচ্ছে পুলিশ  বুলেটবিদ্ধদেরও মারধর করছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:০৬
বুলেটবিদ্ধ যুবক। দ্বিতীয় ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

বুলেটবিদ্ধ যুবক। দ্বিতীয় ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

ত্রিপুরার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল নিয়ে বিক্ষোভের জেরে ফের মুখ পুড়ল রাজ্যের বিজেপি সরকারের। বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার নিন্দা, সমালোচনার মধ্যেই এ বার রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে ভাইরাল হল দু’টি ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, গুলিবিদ্ধ দুই যুবককে নিয়ে হাসপাতালমুখো অ্যাম্বুল্যান্স আটকে দিয়েছেন ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর)-এর কর্মীরা। গালিগালাজ করছে আহতদের। সে সব যাতে ছড়াতে না পারে, তার জন্য গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ত্রিপুরায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বিজেপি সরকার। কিন্তু তার পরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দু’টি ভিডিয়ো।

ওই ভিডিয়োতে যে অডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে তাতে শোনা যাচ্ছে আহতদের আর্ত চিৎকার। খুব কাঁপতে থাকা একটি ভিডিয়োতে শোনা যাচ্ছে পুলিশ বুলেটবিদ্ধদেরও মারধর করছে। ব্যাপক মারধর করা হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সের চালককেও। তার পর প্রাণে বাঁচতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন চালক।

৬ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের প্রথম ভিডিয়োর সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে ৯ সেকেন্ডের আরও একটি ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে দুই বুলেটবিদ্ধ যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে রয়েছেন। চালকের আসন ফাঁকা। অ্যাম্বুল্যান্সের উইন্ড শিল্ড এবং পিছনের কাচ ভাঙা।

দেখুন একটি ভিডিয়ো

উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ছাত্র সংগঠন নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (‘নেসো’) গত ৮ জানুয়ারি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিলের প্রতিবাদ করে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ‘নেসো’ ছাড়াও, উত্তর-পূর্ব ভারতের ৩০টি গণসংগঠনও ওই ধর্মঘটে সামিল হয়। ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফেডারেশন (টিএসএফ) এবং ইন্ডিজেনাস ন্যাশনালিস্ট পার্টি অফ ত্রিপুরা (আইএনপিটি) ওই দিন ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তেমনই একটি বিক্ষোভ চলছিল পশ্চিম ত্রিপুরার মাধব বাড়ি এবং খুমুলওয়ং এলাকায়। ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।

আরও পড়ুন- নাগরিকত্ব বিল ঘিরে উত্তাল ত্রিপুরা, গুলিবিদ্ধ চার​

আরও পড়ুন- উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ, চালু হল নয়া আইন​

পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলি‌শ। সংঘর্যে ৬ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জনই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই ওই দু’টি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে ত্রিপুরা সরকার। সূত্রের খবর, ওই ভিডিয়োতে যে দুই আহত যুবককে দেখা যাচ্ছে তাঁদের নাম সুমিত দেববর্মা এবং ললিত দেব বর্মা। সুমিতকে পরে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে চিকি‌ৎসার জন্য। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৮ বছরের সুমিত মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

ত্রিপুরা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল, রাজীব সিংহ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সে দিন বিক্ষোভকারীরা এতটাই হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিলেন যে, গুলি চালানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না পুলিশের সামনে। তবে পুলিশ আহতদের অ্যাম্বুল্যান্স আটকে ভাঙচুর করেছে, এই অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘এটা কখনওই সম্ভব নয়। কারণ, পুলিশই আহতদের জিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’

কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেকেই যাঁরা সে দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস-এর জওয়ানরা ওই অ্যাম্বুল্যান্স আটকে ভাঙচুর করে। পরে পুলিশকর্তারা সেখানে গিয়ে সেই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে আহতদের উদ্ধার করেন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয় পুলিশের গাড়িতেই। তবে ভাইরাল দু’টি ভিডিয়ো নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল ত্রিপুরা। প্রতিবাদে পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং গণসংগঠন।

Tripura Citizenship Bill ত্রিপুরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy