ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে দেশ থেকে অবৈধবাসী বিতাড়ন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত অবৈধবাসী ভারতীয়দের নিয়ে আমেরিকার তিনটি বিমান ভারতে এসেছে। বিতাড়িতদের হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকলের বেড় পরানো নিয়ে জলঘোলাও কম হচ্ছে না। সেই আবহেই এ বার দেশে ফেরা এক শিখ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি শোনালেন মার্কিন বন্দিশিবিরে কাটানো ভয়াবহ দিনগুলির গল্প। জানালেন, দীর্ঘ দিন মেলেনি পর্যাপ্ত খাবার, জল। এমনকি, এক পর্যায়ে মাথা থেকে টেনে খুলে নিয়ে তাঁর পাগড়িটিও ফেলে দেওয়া হয়েছিল আবর্জনা ফেলার পাত্রে!
আরও পড়ুন:
পঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা যতীন্দ্র সিংহ। বয়স ২৩। মাস তিনেক আগে কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকার উদ্দেশে। ২৭ নভেম্বর আমেরিকার সীমান্তে ধরা পড়ে যান। সেই থেকে ঠাঁই হয় বন্দিশিবিরেই। তাঁর অভিযোগ, সেখানে জোর করে খুলে ফেলা হয় তাঁর মাথার পাগড়ি। বলা হয়, বন্দিশিবিরে পাগড়ি পরার অনুমতি নেই। অভিযোগ, এর পর পাগড়িটি নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে যতীন্দ্র জানিয়েছেন, শুধু তা-ই নয়, বন্দিশিবিরে অত্যাচারও করা হত অবৈধবাসীদের। পর্যাপ্ত খাবার কিংবা জলের ব্যবস্থা ছিল না। কখনও কখনও দীর্ঘ ক্ষণ অভুক্ত অবস্থাতেই কাটাতে হত। কখনও আবার জুটত শুধু চিপ্স এবং ফলের রস। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিখ সংগঠন। আমেরিকার ব্যবস্থাপনার কড়া নিন্দা করেছে শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি)।
রবিবার রাতে আরও ১১১ জন অবৈধবাসী ভারতীয়ের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন যতীন্দ্র। তাঁর অভিযোগ, ৩৬ ঘণ্টার গোটা যাত্রাপথে হাতে-পায়ে বাঁধা ছিল শিকল। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দালালের প্রতিশ্রুতিতে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। দালাল তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিরাপদে সীমান্ত পার করিয়ে দেবেন। কিন্তু সীমান্তে বেগতিক দেখে যতীন্দ্রদের ফেলে মাঝপথে চম্পট দেন দালাল। সেই থেকে বন্দিশিবিরেই ঠাঁই হয় তাঁর মতো আরও অনেকের। ‘‘আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই সব জমিজমা বিক্রি করে দিয়েছে আমার পরিবার। টাকা জোগাড় করার জন্য বিবাহিত দুই বোনের গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছে,’’ যতীন্দ্রের গলায় আক্ষেপের সুর!
আরও পড়ুন:
রবিবার রাত ১০টা নাগাদ অবৈধবাসীদের নিয়ে পঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে মার্কিন বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমান। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এ বারের ১১২ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হরিয়ানার বাসিন্দা রয়েছেন। হরিয়ানার ৪৪ জন, গুজরাতের ৩৩ জন এবং পঞ্জাবের ৩১ জন রয়েছেন ওই তালিকায়। এর আগে শনিবার রাতেও ১১৯ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসরে অবতরণ করেছিল আমেরিকার বিমান। তবে দ্বিতীয় দফায় সকলকে হাতকড়া পরিয়ে ফেরানো হয়নি বলে দাবি। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, দ্বিতীয় বারের অবৈধবাসীদের মধ্যে রেহাই দেওয়া হয়েছে মহিলা ও শিশুদের। যদিও অভিযোগ, পুরুষদের জন্য কড়াকড়িতে একচুলও শিথিলতা ছিল না।
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সে দেশে শুরু হয়ে যায় অবৈধ অভিবাসী তাড়নের প্রক্রিয়া! অভিযোগ, সেই সময় থেকেই নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির গুরুদ্বারগুলিতে একাধিক ‘অভিযান’ চালানো হয়। সে সময়েও শুরু হয়েছিল বিতর্ক। একযোগে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে সে দেশের শিখ সংগঠনগুলি। কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় শিখ আমেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড (এসএএলডিএফ)। তাদের দাবি ছিল, এতে শিখদের ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। সেই আবহেই এ বার পাগড়িকাণ্ডে শুরু হল বিতর্ক।