Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Uttarakhand

চোখের সামনে সংগ্রাম দেখলেন মহাত্মা দেবীকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল জল,কাদার স্রোত

চার দিকে ধ্বংসলীলার চিহ্ন। ছবি: পিটিআই।

চার দিকে ধ্বংসলীলার চিহ্ন। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
দেহরাদূন শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৫২
Share: Save:

বিপর্যয়ের সেই সব দৃশ্যের সাক্ষী তিনি। রেনি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সংগ্রাম সিংহ রাওয়ত। সোমবার বলছিলেন, ‘‘চোখের সামনে কাছের মানুষগুলোকে এক এক হিমবাহের জল, কাদা, পাথরের মধ্যে হারিয়ে যেতে দেখছিলাম। শেষ মুহূর্তে বাঁচার জন্য আর্ত চিৎকার এখনও কানে লেগে। অসহায়ের মতো এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে হচ্ছিল।’’

এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংগ্রাম বলেন, ‘‘রবিবারের সকাল আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা ছিল না। কিন্তু কী বিপদ ওৎ পেতে আছে সেটা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি পাহাড়ের কোলে ধউলিগঙ্গার তীরবর্তী গ্রামগুলো। সকাল তখন ১০টা। বিশাল একটা গর্জনের মতো আওয়াজ। মনে হচ্ছিল ভারী কোনও কিছু গড়িয়ে আসছে। কিন্তু সেটা কী, তা বুঝে ওঠার আগেই দৈত্যাকার সেই বিশাল হিমবাহের স্রোত চোখের নিমেষে নেমে এল পাহাড় বেয়ে। চিৎকার, চেঁচামেচি, জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি— তার পরই সব শান্ত।’’

সংগ্রামের কথায়, ‘‘পার্শ্ববর্তী জুগজু গ্রাম থেকে বছর বিয়াল্লিশের মহাত্মা দেবী রেনিতে গিয়েছিলেন রান্নার কাঠ এবং গবাদি পশুর খাবার জোগাড়ে। সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সংগ্রামের। নদীখাতের কাছেই ছিলেন মহাত্মা। দৈত্যাকার হিমবাহের স্রোত যখন ধেয়ে আসছিল, মহাত্মার ছেলে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে তাঁকে ডাকতে শুরু করেন। সেই হাঁকাহাঁকিতে পিছন ফিরে দেখি জল, কাদার তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মহাত্মাকে। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছিল সেই দৃশ্য।’’

কয়েক মিটার দূরেই রেনি চুকসা গ্রামে ধউলিগঙ্গার ধারে গবাদি পশু চড়াতে গিয়েছিলেন সত্তর বছরের অনিতা দেবী। তাঁর সঙ্গে নাতি-নাতনিও ছিল। তাঁরা পালিয়ে কোনও মতে পাহাড়ের উপর দিকে উঠতে পারলেও অনিতা দেবী অসহায়ের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। মুহূর্তে হিমবাহের গ্রাসে চলে যান তিনি। ধউলিগঙ্গালাগোয়া অন্য গ্রামগুলোতে বাসিন্দারা পালিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পাথর, বালির গুঁড়োয় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। শ্বাস নিতে পারছিলেন না অনেকেই। ফলে দ্রুত উপরের দিকে উঠতে পারেনননি অনেকেই।

সংগ্রাম বলেন, “চার দিক লন্ডভণ্ড করে ধউলি যখন কুল কুল করে বইছে, রেনি-সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে খবর নিতে ছুটলাম আমরা অনেকে মিলে। কিন্তু গিয়ে যা দেখলাম, তাতে চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছিল। যে পরিচিত দৃশ্য, যে গ্রাম, লোক, এলাকা দেখে অভ্যস্ত, সেগুলো কোথায়? কিছুই চিনতে পারা যাচ্ছে না। শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কাদার আস্তরণে ঢাকা। কয়েক ঘণ্টা আগে যে মানুষগুলোকে দেখেছি, তাঁদের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।”

এই ধ্বংসলীলার জন্য কিন্তু বাঁধ-সহ বিভিন্ন নির্মাণকাজকেই দায়ী করছেন সংগ্রাম এবং রেনি গ্রামের আরও এক বাসিন্দা কুন্দন। তাঁদের মতে, এই এলাকা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে যথেচ্ছ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির উপর। ঋষিগঙ্গা বাঁধ প্রকল্প নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন দাখিল করেন সংগ্রাম এবং কুন্দন। এর পরই কুন্দন বলেন, “এটা হওয়ারই ছিল। যা ঘটল তাতে প্রকৃতি ফের জানান দিল, যা হচ্ছে তা মোটেই ঠিক নয়।”

রবিবার নন্দাদেবী হিমবাহ ফেটে হুড়মুড়িয়ে নেমে এসেছিল নীচের দিকে। সামনে যা পেয়েছে সব গ্রাস করতে করতে এগিয়ে গিয়েছে সেই প্রবল জলধারা, কাদা, মাটি, বালি পাথরকে সঙ্গে নিয়ে। জোশীমঠ, তপোবন এবং সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। খোঁজ নেই অনেকের। রেনি-সহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগের পথ রেনি সেতুও নিশ্চিহ্ন। সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। রবিবারই ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার আরও ৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ এখনও শতাধিক। তাঁরা আদৌ জীবিত আছেন কি না সময় যত গড়াচ্ছে, তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হচ্ছে। তবে উদ্ধারকারীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood Uttarakhand Flash flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE