প্রায় ১৫ দিন নিখোঁজ থাকার পর উত্তরপ্রদেশে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন সোনম রঘুবংশী। মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে তিনি স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুন করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সোনমের পিতা দেবী সিংহের অবশ্য দাবি, তাঁর মেয়ে এমন কাজ করতেই পারেন না। গোটাটাই মেঘালয় পুলিশের তৈরি করা গল্প বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্ত হলেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুরের নন্দগঞ্জ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সোনম। আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে মেঘালয় পুলিশ। সোনমের পিতার অবশ্য দাবি, রবিবার রাতে গাজিপুরের একটি ধাবায় গিয়েছিলেন তাঁর কন্যা। সেখান থেকেই সোনম ভাইকে ফোন করেন। তার পর ওই ধাবায় গিয়ে পুলিশ তাঁর মেয়েকে ধরে নিয়ে যায় বলে দাবি সোনমের পিতার।
সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দেবী বলেন, “আমার মেয়ে নিরপরাধ। মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। ও এই কাজ (স্বামীকে খুন) করতে পারে না।” তার পরেই মেঘালয় সরকার এবং সে রাজ্যের পুলিশকে তোপ দেগেছেন সোনমের পিতা। তিনি বলেন, “প্রথম থেকে রাজ্য (মেঘালয়) সরকার মিথ্যা কথা বলছে। মেঘালয় পুলিশও মিথ্যা বলছে। কেন আমার মেয়ে এই কাজ করতে যাবে?” দেবীর দাবি, দুই পরিবারের সম্মতি নিয়েই ওদের (রাজা এবং সোনম) বিয়ে হয়েছিল।
‘আসল সত্যি’ প্রকাশ্যে আনতে সিবিআই তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন সোনমের পিতা। জানিয়েছেন, এই আর্জি নিয়ে তিনি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর এ-ও দাবি যে, সিবিআই তদন্ত শুরু হলেই মেঘালয়ের পুলিশ আধিকারিকেরা গ্রেফতার হবেন।”
ইনদওরের বাসিন্দা রাজা এবং সোনমের বিয়ে হয় গত ১৯ মে। তার পরের দিনই মেঘালয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন নবদম্পতি। ২৩ মে সোহরার একটি হোমস্টেতে শেষ বার তাঁদের দু’জনকে দেখা গিয়েছিল। ১১ দিন পর খাদ থেকে উদ্ধার হয় রাজার দেহ। রক্তমাখা দা এবং বর্ষাতিও মেলে। কিন্তু সোনমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ জানিয়েছিল, গত ২৩ মে দুপুর সওয়া ১টায় আত্মীয়দের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল সোনমের। মনে করা হচ্ছিল, দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েছেন তিনিও। এমনকি, তাঁকে অপহরণ করে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন। কারণ, যেখান থেকে সোনম এবং রাজা নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেখান থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত খুব দূরে নয়। রাজা-সোনমের পরিবারের তরফেও অপহরণের অভিযোগ তোলা হয়। একাধিক বার তদন্ত নিয়ে পরিবারের সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
রাজা-সোনমের ঘটনায় মেঘালয় পুলিশের তরফে বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সে দিক থেকে কোনও খোঁজ মেলেনি। অবশেষে ১৬ দিন পর সোনমের খোঁজ মেলে। স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। মেঘালয়ে নবদম্পতির উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনার তদন্ত যে পথে এগোচ্ছিল, তার মোড় ঘুরিয়ে দিল সোনমের আত্মসমর্পণ।