Advertisement
E-Paper

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক ঘোষণায় উদ্বেগে ভারতের বণিকমহল! বিপাকে পড়তে পারে কোন কোন সংস্থা?

এশিয়ার অন্য বেশ কিছু দেশের তুলনায় ভারতের উপর বেশি হারে শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ভিয়েতনামের উপর ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার উপর ১৯ শতাংশ, জাপানের উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সেখানে ভারতের উপর শুল্কহার ২৫ শতাংশ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ১২:৫৬
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার মাঝেই ভারতের উপর আচমকা ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি ব্যবসায় রুশ-ঘনিষ্ঠতার জন্য একটি পৃথক ‘জরিমানা’ (পেনাল্টি)-র কথাও বলেছেন তিনি। শুক্রবার থেকেই এই শুল্ক কার্যকর করছে আমেরিকা। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছে ভারত সরকার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’ জানিয়েছে, এই শুল্কের ফলে বিপাকে পড়তে পারে বৈদ্যুতিন সামগ্রী, ওষুধ, মূল্যবান রত্ন, গয়না, এবং বস্ত্র শিল্প। সমস্যায় পড়তে পারে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির সংস্থাগুলিও।

ভারত থেকে আমেরিকায় কোন পণ্য কতটা রফতানি হয়, তার ভিত্তিতে একটি সম্ভাবনা তুলে ধরেছে ‘ব্লুমবার্গ’। এ দেশ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের মূল্যবান রত্ন এবং গয়না আমেরিকার বাজারে যায়। এই অবস্থায় ভারতের উপর ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণা ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছে করছে এ দেশের রত্ন এবং গয়না রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ। বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এর ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি এবং রফতানিতে দেরি-সহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আমেরিকায় পেটেন্টহীন ওষুধের সবচেয়ে বড় রফতানিকারী দেশ হল ভারত। বছরে আনুমানিক আট হাজার কোটি ডলারের পেটেন্টহীন ওষুধ ভারত থেকে আমেরিকায় যায়। দেশের প্রথম সারির বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার লাভের ৩০ শতাংশই আসে আমেরিকার বাজার থেকে। ট্রাম্পের শুল্ক-কোপের প্রভাব পড়তে পারে ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী শিল্পেও। দেশের কিছু বড় সংস্থা যেমন, সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড, ডক্টর রেড্ডি’স ল্যাবরেটরিজ় লিমিটেড, সিপলা লিমিটেডের লভ্যাংশের অন্তত ৩০ শতাংশ আসে আমেরিকা থেকে। ‘ব্লুমবার্গ’ অনুসারে, ২০২২ সালে আমেরিকায় প্রতি দশটি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে চারটিতে ভারতীয় সংস্থার তৈরি ওষুধ ছিল।

আমেরিকার বিভিন্ন নামী বস্ত্রবিপণী সংস্থাকে পোশাক এবং জুতো সরবরাহ করে ভারত। যেমন, ‘দ্য গ্যাপ ইনকর্পোরেটেড’, ‘পেপে জিন্‌স’, ‘ওয়ালমার্ট ইনকর্পোরেটেড’ এবং ‘কস্টকো হোলসেল কর্পোরেশন’-এর মতো মার্কিন বস্ত্রবিপণী সংস্থাকে পোশাক সরবরাহ করা হয় ভারত থেকে। দিল্লি চাইছিল যাতে ভিয়েতনামের তুলনায় কম শুল্ক চাপানো হয় ভারতের উপর। তাতে এই শিল্প ক্ষেত্রটি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা সুবিধা পেত বলে মনে করা হচ্ছে। ‘কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি’-র আশঙ্কা, শুল্কের কারণে ‘কঠিন চ্যালেঞ্জের’ মুখে পড়তে পারে এই শিল্প। ট্রাম্পের শুল্কের ফলে ‘বর্ধমান টেক্সটাইল লিমিটেড’, ‘ওয়েলসপান লিভিং লিমিটেড’, ‘ইন্দো কাউন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’ এবং ‘অরবিন্দ ফ্যাশন্‌স লিমিটেড’-এর মতো সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়তে পারে। এরা প্রত্যেকেই আমেরিকায় বস্ত্র রফতানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত।

আমেরিকার বাজারে যে আইফোন পাওয়া যায়, তা তৈরি হয় ভারতেই। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরের পরে আইফোন-সহ অন্য স্মার্টফোন এবং বৈদ্যুতিন সামগ্রী প্রস্তুতকারী ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ‘ব্লুমবার্গ’। আগে আমেরিকায় বিক্রি হওয়া আইফোনগুলি চিনে তৈরি করত ‘অ্যাপ্‌ল’। পরে ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য ভারতে সেগুলি তৈরি করা শুরু করে ওই মার্কিন সংস্থা। তবে ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ফলে এই বাণিজ্যিক কৌশল থেকে আবার পিছিয়ে যেতে পারে ‘অ্যাপ্‌ল’।

যে দেশগুলি আমেরিকার সঙ্গে একে বারে প্রারম্ভিক পর্বে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে ভারত অন্যতম। সে দিক থেকে ওয়াশিংটন থেকে কিছু সুবিধা মিলবে বলেও আশা করছিল নয়াদিল্লি। ভারত চাইছিল যাতে শুল্ক হার আরও কম থাকে। ১৫ শতাংশের মধ্যে শুল্কহারকে সীমিত রাখার আশা করছিল ভারত। কিন্তু এশিয়ার অন্য বেশ কিছু দেশের তুলনায় ভারতের উপর বেশি হারে শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ভিয়েতনামের উপর ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার উপর ১৯ শতাংশ, জাপানের উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সেখানে ভারতের উপর শুল্কহার ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে দিল্লি অস্ত্র এবং জ্বালানি কেনাতেও অসন্তুষ্ট ট্রাম্প। এর জন্যও পৃথক ‘জরিমানা’র কথা বলেছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেননি।

ট্রাম্পের ঘোষণার কী প্রভাব পড়তে পারে ভারতে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে ‘ব্লুমবার্গ’ জানিয়েছে, শুল্কহার ২৫ শতাংশ ছাপিয়ে গেলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের প্রায় ১০ শতাংশ রফতানি প্রভাবিত হতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারতের উপর কতটা প্রভাব পড়তে পারে, তা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে। যেমন, ওই শিল্পে ভারতে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষেত্রে কত শতাংশ শুল্ক চাপানো হচ্ছে, কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শুল্কহার (সেক্টোরিয়াল ট্যারিফ) কত থাকছে, ট্রাম্প-ঘোষিত জরিমানা কতটা হবে— এই বিষয়গুলির উপর নির্ভর করতে পারে ভারতের বাণিজ্য। তবে এগুলির মধ্যে কোনওটিই এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার প্রভাব পড়তে পারে দেশীয় তৈল শোধন সংস্থাগুলির উপরে। বর্তমানে ভারত যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, তার প্রায় ৩৭ শতাংশই রাশিয়ার। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের আবহে তুলনামূলক কম দামে তেল বিক্রি শুরু করে রাশিয়া। সেই সুযোগ ব্যবহার করে ভারতও। যদি ট্রাম্পের ‘জরিমানা’র ফলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বিঘ্নিত হয়, তবে ‘ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড’, ‘ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড’, ‘হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড’ এবং ‘রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’-এর মতো সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়তে পারে। বস্তুত, চলতি বছরেই রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ৫ লক্ষ ব্যারেল তেল কেনার জন্য একটি চুক্তি করেছে রিলায়্যান্স।

Donald Trump India US Trade US Tariff
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy