প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টির কর্মী দুলার চাঁদ যাদবকে খুনের ঘটনায় ভোটের মুখে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বিহার পুলিশ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শাসকদল জেডিইউ-এর প্রার্থী অনন্ত কুমার সিংহ। পটনার কাছে মোকামা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এ বছর তাঁকে প্রার্থী করেছিল নীতীশ কুমারের দল। ভোটগ্রহণ আগামী ৬ নভেম্বর। অর্থাৎ, ভোটের মাত্র পাঁচ দিন আগে প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে খুনের মামলায়। বিহারের রাজনীতি যা নিয়ে উত্তাল। গ্রেফতারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বার্তা দিয়েছেন অনন্ত। লিখেছেন, ‘‘সত্যমেব জয়তে। মোকামার মানুষের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ বার মোকামার মানুষই ভোটে লড়বে।’’ কিন্তু কে এই অনন্ত? কেন তাঁকে নিয়ে এত শোরগোল?
বিহারের রাজনীতিতে রীতিমতো বর্ণময় চরিত্র মোকামার চার বারের বিধায়ক অনন্ত ওরফে ‘ছোটে সরকার’। বেশির ভাগ সময়েই সাদা পোশাক পরে থাকেন। বিহারের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলেন, মোকামায় ছোটে সরকারের আলাদা ‘সরকার’ চলে। সেখানে তিনিই শেষ কথা। রাজধানী পটনা থেকে মোকামার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারও নয়। ২০০৫ সাল থেকে সেখানে ‘রাজত্ব’ চালাচ্ছেন অন্তত। কখনও ভোটে হারেননি।
আরও পড়ুন:
২০০৫ সালে অনন্ত প্রথম বিহার বিধানসভায় প্রবেশ করেছিলেন জেডিইউ-এর টিকিটে মোকামা থেকে জিতে। ২০১০ সালে সেই আসন ধরে রাখেন। ২০১৫ সালে নীতীশ কুমার লালু প্রসাদের আরজে়ডির সঙ্গে হাত মেলালে জেডিইউ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন অনন্ত। তখন নির্দল হিসাবে মোকামায় লড়েছিলেন, হারিয়ে দিয়েছিলেন জেডিইউ প্রার্থীকেই!
২০২০ সালের নির্বাচনের আগে আরজেডিতে যোগ দেন অনন্ত। তত দিনে নীতীশ-লালুর ‘বিচ্ছেদ’ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেলেও মোকামা কিন্তু বদলায়নি। সেখানে ‘ছোটে সরকার’ই আবার জেতেন। ২০২২ সালে অস্ত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় নাম জড়ানোর পর বিধানসভার সদস্যপদ ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। তখন তাঁর স্ত্রী নীলম দেবী আরজেডির টিকিটে মোকামার উপনির্বাচন লড়েন এবং বিধায়ক হয়ে বসেন। এ বছর আর আরজেডি নয়, জেডিইউ-তে ফিরে এসেছিলেন অনন্ত। তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে। তবে ভোটের মুখে তিনি গ্রেফতার হলেন। জামিন না-পেলে জেলে বসেই লড়তে হতে পারে নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য তাতে ভোটের ফলাফলে খুব একটা ফারাক হবে বলে মনে করছেন না। কারণ ছোটে সরকার ‘বাহুবলী’। শ্রীঘরে বসেও তিনি অনন্ত শক্তিঘর।
মনোনয়ন পত্র অনুযায়ী, অনন্তের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ২৮টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অত্যাচার, অপহরণ এবং হেনস্থার অভিযোগ অন্যতম। এ ছাড়া, চুরি, অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া এবং অস্ত্র সংক্রান্ত একাধিক মামলাও রয়েছে। হলফনামা বলছে, অনন্ত ১৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিক। রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি (২ কোটির টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজ়ার, এবং টয়োটা ফরচুনার এসইউভি)। এ ছাড়া, একটি হাতি, একটি ঘোড়া এবং বেশ কিছু গবাদি পশুর মালিক মোকামার ছোটে সরকার। স্থাবর, অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭.৮৮ কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রী তথা মোকামার বর্তমান বিধায়কের ৬২.৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
মোকামায় জন সুরাজ পার্টির হয়ে লড়ছেন প্রিয়দর্শী পীযূষ। নিহত দুলার সম্পর্কে তাঁরই আত্মীয়। গত বৃহস্পতিবার প্রিয়দর্শীর সমর্থনে একটি মিছিলে দুলার ছিলেন। সেই মিছিল অনন্তের সমর্থনে আয়োজিত মিছিলের মুখোমুখি চলে আসে এবং দুই দলের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তাতেই দুলারের মৃত্যু হয়। পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ফুসফুস ছিঁড়ে, পাঁজরের হাড় ভেঙে মৃত্যু হয়েছে দুলারের। এ ছাড়া, তাঁর গোড়ালিতে গুলি লেগেছিল। তার পরেই অনন্ত-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হল।