বরফহীন লাদাখ। ছবি: পিটিআই।
আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পশ্চিম হিমালয়ে ৮০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। সরাসরি তার প্রভাব পড়েছে ভূস্বর্গেও। শীতকালে যে বরফের টানে কাশ্মীরে ছুটে যান পর্যটকেরা, সেই বরফেরই দর্শন মেলেনি বহু জায়গায়। ভরা শীতেও শ্রীনগর, সোনমার্গ এবং গুলমার্গের মতো আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলগুলিতে বরফের দেখা না মেলায় হা-হুতাশ করতে হচ্ছে পর্যটকদের। ইতিমধ্যেই এর কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।
এই আবহে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ব্যাখ্যা, এই মরশুমে সক্রিয় পশ্চিমি ঝঞ্ঝার অভাবেই চেনা মেজাজে দেখা যায়নি কাশ্মীর এবং লাদাখকে। এই কারণেই শীতে কাশ্মীর গিয়ে শুকনো এবং বরফহীন খটখটে গুলমার্গ দর্শন করতে হয়েছে পর্যটকদের। দু’টি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা অবশ্য দেশবাসীর শীতভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তার একটি সক্রিয় ছিল ডিসেম্বরে, অপরটি জানুয়ারি মাসে। কিন্তু দু’টি ঝঞ্ঝাই মূলত প্রভাব ফেলেছে গুজরাত, উত্তর মহারাষ্ট্র, পূর্ব রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে। আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, লাদাখ এবং কাশ্মীর উপত্যকা যেখানে শীতের মরসুমে গড়ে ৫ থেকে ৭টি পশ্চিমি ঝঞ্ঝার সম্মুখীন হয়, এ বার সেখানে কোনও সক্রিয় ঝঞ্ঝাই প্রভাব ফেলেনি।
কিন্তু কী এই পশ্চিমি ঝঞ্ঝা? তা হল ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা এবং ভারী বায়ু। সাধারণত কাশ্মীর দিয়ে তা ভারতে ঢোকে এবং তার পরে মধ্য ভারত দিয়ে পূর্ব ভারতে বয়ে যায় কিংবা কখনও কখনও উত্তরাখণ্ড হয়ে নেপালের দিকে চলে যায়। এই ধরনের ঝঞ্ঝার প্রভাবে কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশে তুষারপাত হয় এবং বৃষ্টি হয় উত্তর-পশ্চিম ভারতে। সেই সময় উত্তুরে হাওয়া বাধা পায়। ঝঞ্ঝা যদি মধ্য ভারত হয়ে পূর্ব ভারতে বয়ে আসে, তা হলে এই অঞ্চলেও বৃষ্টি নামে এবং সে ক্ষেত্রে শীত কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে।
ঝঞ্ঝা সক্রিয় না থাকায় কাশ্মীরের বহু জায়গায় যেমন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি থেকেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, তেমনই সমতল এলাকাগুলিতে কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। সচরাচর ভূমধ্যসাগরের দিক থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস এই কুয়াশার চাদরকে সরিয়ে দেয় অন্যান্য বার।
বরফের দেখা না পাওয়ায় পর্যটক কম আসার আশঙ্কা তো রয়েছেই, এ বার অন্য একটি আশঙ্কাও করছে কাশ্মীরবাসী। মনে করা হচ্ছে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের অভাবে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা যেতে পারে সেখানে। আশঙ্কাটি যে অমূলক নয়, তা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশই। শের-ই-কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের ডিন রাইহানা হাবিব জানাচ্ছেন, ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে কাশ্মীরে যে তুষারপাত হয়, তার ফলেই বাকি মরসুমে পানীয় জলের চাহিদা মেটে। এ বার পানীয় জলের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর উপর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জলসঙ্কটের ফলে কাশ্মীরের কৃষিও এই বছর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy