Advertisement
E-Paper

যানজটে আটকে থাকা তিন জনের মৃত্যু! জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাড়াতাড়ি বেরোনোর দরকারটা কী?

শুক্রবার প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে আটকে যায় চার হাজার গাড়ি। অভিযোগ, যানজটে আটকে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। এ নিয়ে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১২:৩০
আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা যানজট।

আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা যানজট। —ফাইল ছবি।

টানা ৪০ ঘণ্টা আট কিলোমিটার রাস্তা অবরুদ্ধ। যানজটে থমকে গিয়েছিল প্রায় ৪ হাজার গাড়ি। ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে অসুস্থ হয়ে তিন জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে। এ নিয়ে আদালতের মুখোমুখি হয়ে পাল্টা ‘অবাক করা’ যুক্তি দিলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। তাঁদের দাবি, কাজ ছাড়াই মানুষ বড্ড তাড়াতাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন!

ইনদওর-দেওয়াস জাতীয় সড়কে ছয় লেনের রাস্তার কাজ চলছে। অন্য দিকে, ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে বেশ কিছু রাস্তায় জল জমে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই যানজট শুরু হয় ওই জাতীয় সড়কে। শুক্রবার প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে চার হাজার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। অভিযোগ, যানজটে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্দীপ পটেল নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাতেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত মৃত্যু হয় তাঁর। শুক্রবার সকালে বলরাম পটেল এবং কমল পঞ্চাল নামে আরও দু’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। যানজট থেকে তাঁদের বার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল চলছে মধ্যপ্রদেশে। মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা।

সোমবার ওই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বিবেক রুসিয়া এবং বিচারপতি বিনোদকুমার দ্বিবেদীর বেঞ্চে। আদালতের তলবে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন পক্ষ। তার মধ্যে ছিলেন এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ (দিল্লি ও ইনদওরের অফিস), সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক, ইনদওর জেলাশাসক কর্তৃপক্ষ, ইনদওর পুলিশ কমিশনার ইত্যাদি। সেখানে যানজটে অসুবিধা এবং মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের জবাব, ‘‘কাজ ছাড়া এত তাড়াতাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন কেন মানুষ?’’ এমন মন্তব্যে শোরগোল শুরু হয় কোর্টরুমে। পাল্টা মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘‘দরকার ছাড়া এই যানজটে কেউ ইচ্ছা করে বেরিয়ে পড়েন বলে মনে হয়?’’

মৃত বলরামের ভাইপো সুমিত পটেল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এই সওয়ালে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘‘কোনও কারণ ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সময় কার হাতে আছে? আমরা এক জনকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছিলাম। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পরিবারের অসুস্থ সদস্যকে। অব্যবস্থার পরে এমন যুক্তি দিলে আর কাকে কী বলার থাকতে পারে।’’ বস্তুত, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এমন মন্তব্যকে অনেকেই অসংবেদনশীল বলে মনে করছেন। আদালত জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে মধ্যে একটি বিকল্প রাস্তার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। কাজ শেষ করতে দেরির কারণ হিসাবে কর্মীদের ১০ দিনের ধর্মঘটকে জন্য দায়ী করেছে এনএইচএআই। তবে কাজে বিলম্বের নেপথ্যে এই যুক্তিতে অসন্তুষ্ট আদালত।

মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী গিরিশ পটবর্ধন বলেন,‘‘হাই কোর্ট এনএইচএআই, ইনদওর পুলিশ কমিশনার এবং ইনদওর কালেক্টরকে নোটিস জারি করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব তলব করেছে। উপরন্তু, আদালত টোল কোম্পানি এবং রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থাকে মামলায় ‘পার্টি’ করার নির্দেশ দিয়েছে। এনএইচএআইকে রাস্তার ঠিকাদার এবং টোল অপারেটরকে নোটিস দিতে বলেছে হাই কোর্ট।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) আদালতে এনএইচএআই সওয়াল করেছে, ‘কেন কাজ ছাড়া এত মানুষ আগেভাগে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন?’’ কোর্টরুমে এই প্রশ্নে আমরা বিস্মিত হয়েছি। মাননীয় আদালত জানায়, এই ধরনের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে সাধারণ নাগরিক আর নিরাপদে তাদের ঘর থেকে বার হতে পারবেন না। আদালত এই যুক্তিতে গুরুত্বও দেয়নি।’’ আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘‘এ বার থেকে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘পারমিশন স্লিপ’ নিতে হবে মানুষকে?’’

NHAI Madhya Pradesh High Court traffic jam Deaths
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy